পুঁজিবাজার ডেস্ক : ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগ গুরুরা মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের আহরিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আগে বাজার ও সিকিউরিটিজ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। ঝুঁকি এড়িয়ে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি বৃহত্তর ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিয়োগ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী এবং নিজেদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়াতে চান এমন বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই এই ১০টি ক্ল্যাসিক বই পড়া উচিত।
দ্য ইন্টেলিজেন্ট ইনভেস্টর (১৯৪৯)
এ বইটির রচয়িতা ভ্যালু ইনভেস্টিংয়ের অবিসংবাদিত জনক বেঞ্জামিন গ্রাহাম। এখানেই প্রথম সিকিউরিটি অ্যানালাইসিসের ধারণা উদ্ভাবিত হয়, যা কিনা বিনিয়োগকারীদের একটি প্রজন্মের মধ্যে ভিত গড়ে দিয়েছিল। এ প্রজন্মের মধ্যে গ্রাহামের প্রিয় ছাত্র ওয়ারেন বাফেটও ছিলেন। বইটি সম্পর্কে বাফেট বলেন, ‘বিনিয়োগের ওপর লেখা বইগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত এটিই শ্রেষ্ঠ বই।’ ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত এ বই পাঠ করলে একজন বিনিয়োগকারী সময়ের সঙ্গে পরীক্ষিত নীতিগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগুলোকে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন।
কমন স্টকস অ্যান্ড আনকমন প্রফিটস (১৯৫৮)
ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের অগ্রদূত ফিলিপ ফিশার এ বইয়ের রচয়িতা। আধুনিক ইনভেস্টমেন্ট থিওরিতে ফিলিপের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। গ্রোথ পটেনশিয়ালের ওপর ভিত্তি করে শেয়ার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। কমন স্টকস অ্যান্ড আনকমন প্রফিটস বইটির মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারী একটি কোম্পানির মান এবং এর মুনাফা করার সক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে পারবেন। ১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত এ বই অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পরও একই রকম প্রাসঙ্গিক।
স্টকস ফর দ্য লং রান (১৯৯৪)
হোয়ারটন স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক জেরেমি সিগেল এ বইয়ের রচয়িতা। নাম থেকেই বইটির বিষয় সম্পর্কে অনেকটা ধারণা করা যায়। বইটির মূল বিষয়বস্তু হলো দীর্ঘ সময়ের জন্য শেয়ারে বিনিয়োগ। সিগেলের মতে, পারফরম্যান্সের দিক থেকে অন্য সব ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেটের চেয়ে ইকুইটি অবশ্যই এগিয়ে থাকবে। শুধু তা-ই নয়, তিনি মনে করেন, মুদ্রাস্ফীতির এ যুগে স্টক রিটার্ন অনেক বেশি নিরাপদ ও অনুমানযোগ্য।
লার্ন টু আর্ন (১৯৯৫)
দীর্ঘমেয়াদি গ্রোথ স্টাইল বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত পিটার লিঞ্চ এ বইটির রচয়িতা। ১৯৮০-এর দশকে ‘ফিডেল্টি ম্যাগেলন ফান্ডে’র ম্যানেজার হিসেবে প্রথম আলোচনায় আসেন লিঞ্চ। তরুণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি ‘লার্ন টু আর্ন’ বইটি লেখেন। এতে মূলত বিনিয়োগের মৌলিক ধারণাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া তার আরো দুটি বিখ্যাত বই হলো ওয়ান আপ অন ওয়াল স্ট্রিট (১৯৮৯) ও বিটিং দ্য স্ট্রিট (১৯৯৪)। নিজ সিদ্ধান্তে বিনিয়োগের সুফল সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের অবহিত করতে তিনি রচনা করেন ‘ওয়ান আপ অন ওয়াল স্ট্রিট’। ম্যাগেলন ফান্ড পরিচালনার সময় শেয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেন তার ওপর ভিত্তি করে রচনা করেন ‘বিটিং দ্য স্ট্রিট’।
এ র্যান্ডম ওয়াক ডাউন ওয়াল স্ট্রিট (১৯৭৩)
মার্কিন অর্থনীতিবিদ বারটন জি ম্যালকিয়েল এ বইটির লেখক। বইটির মূল বক্তব্য হলো, বাজার জয়ের জন্য কোনো ধরনের মৌলিক বা টেকনিক্যাল গবেষণাই বিনিয়োগকারীকে সহায়তা করবে না। যার ফলে, শেষ পর্যন্ত একজন বিনিয়োগকারী যথেচ্ছভাবেই বিনিয়োগ করবেন। এ যুক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অন্য একাডেমিকদের মতো তিনিও ব্যাপক গবেষণা ও পরিসংখ্যান কাজে লাগিয়েছেন। যদিও তার এ ধারণাকে অনেকেই বিতর্কিত বলে সাব্যস্ত করেছেন। অনেকে একে ব্লাসফেমাস ধারণা বলেও মনে করেন।
দি এসেজ অব ওয়ারেন বাফেট : লেসনস ফর করপোরেট আমেরিকা (২০০১, সংশোধিত সংস্করণ)
বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেন বাফেট গত কয়েক দশকে শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে যেসব চিঠিপত্র লিখেছেন তার সংগ্রহ এ বই। এখানে মূলত তার বিনিয়োগ কৌশলগুলোই উঠে এসেছে। বাফেট যদিও তার সুনির্দিষ্ট স্টক হোল্ডিংসের বিষয়ে খুব কমই মন্তব্য করেন, তার পরও বিনিয়োগ নীতির বিষয়ে তিনি খুবই স্বচ্ছ।
হাউ টু মেক মানি ইন স্টকস (২০০৯, চতুর্থ সংস্করণ)
‘ইনভেস্টরস বিজনেস ডেইলি’র প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম জে ও’নেইল এ বইয়ের রচয়িতা। ও’নেইল ছিলেন শেয়ার বাছাইয়ের ‘ক্যানস্লিম’ পদ্ধতির উদ্ভাবক। ক্যানস্লিমের প্রতিটি অক্ষরের পূর্ণরূপ শেয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক (সি = কারেন্ট কোয়ার্টারলি আর্নিংস পার শেয়ার, এ = অ্যানুয়াল আর্নিংস ইনক্রিজেস ওভার দ্য লাস্ট ফাইভ ইয়ারস ইত্যাদি)। শেয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত যেকোনো বিনিয়োগকারীকে শেয়ার বিশ্লেষণে এ বই সহায়তা করবে।
রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড (১৯৯৭)
মার্কিন ব্যবসায়ী ও লেখক রবার্ট টি কিয়োসাকি এ বইয়ের রচয়িতা। এ বইয়ে কিয়োসাকি মূলত বলতে চেয়েছেন, ধনী পরিবারগুলো তাদের বাচ্চাদের ছোটবেলায় অর্থ সম্পর্কে শেখায়, গরিব ও মধ্যবিত্ত পিতামাতারা প্রায় সময় এ বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলেন। কিয়োসাকির সহজ ও কার্যকরী বক্তব্য হলো সম্পদ বাড়াতে হলে সঠিক সময়ে বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ—এ বিষয়টি প্রত্যেক শিশুর জানা উচিত।
কমন সেন্স অন মিউচুয়াল ফান্ডস (১৯৯৯)
ভ্যানগার্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ইনডেক্স ইনভেস্টিংয়ের জনক জন বোগল এ বইয়ের রচয়িতা। এ বইয়ের শুরুতে বিনিয়োগ কৌশলের প্রাথমিক পাঠ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করা হয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের ওপর অতিরিক্ত ফি ধার্য করার কারণেই এ রকম মন্তব্য করা হয়। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের জন্য এ বই অবশ্যপাঠ্য।
ইরেশনাল এক্সুবারেন্স (২০০০)
মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক প্রধান অ্যালান গ্রিনস্প্যান স্টক মার্কেট ভ্যালুয়েশনের অযৌক্তিকতা নিয়ে ১৯৯৬ সালে যে মন্তব্য করেছিলেন তার ওপর ভিত্তি করেই এ বইয়ের নামকরণ করা হয়েছে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক রবার্ট জে শিলার এ বইয়ের রচয়িতা। যৌক্তিক বাজারের যে মিথ প্রচলিত রয়েছে এ বইতে লেখক মূলত তা নাকচ করেছেন। তার মতে, আবেগ ও গুজবের পাশাপাশি নিজস্ব চিন্তাভাবনার বদলে অন্যের দেখানো পথ অনুসরণের মাধ্যমেই বাজার বেশি প্রভাবিত হয়।
ইনভেস্টোপিডিয়া অবলম্বনে ভাষান্তর- বণিক বার্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।