স্পোর্টস ডেস্ক: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলার ১১৪তম আসরে চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার শাহজালাল। তিনি হোমনা উপজেলার বাসিন্দা ও ফল বিক্রেতা। গত বছর জীবনের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিলেন শাহজালাল। এবার পুরস্কারের কিছু টাকা দিয়ে মায়ের জন্য শাড়ি কেনার কথা জানালেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় এক মিনিটের ফাইনাল খেলায় জীবনকে হারালে শাহজালালকে জয়ী ঘোষণা করেন রেফারি। নগরীর লালদীঘি ময়দানে বিকাল ৪টায় বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলা দেখতে জড়ো হন হাজারো দর্শক।
এবারের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন সৃজন চাকমা এবং চতুর্থ হয়েছেন আবনুর নুর। খেলায় অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন বয়সী ৬০ জন বলী। তাদের মধ্যে আট জন সরাসরি অংশ নেন চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে আর অন্যরা প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেন।
সেমিফাইনালে ১১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের লড়াইয়ে খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমাকে পরাজিত করে ফাইনালে ওঠেন তরিকুল ইসলাম জীবন। অপরদিকে এক মিনিট ২৬ সেকেন্ডে চট্টগ্রামের আনোয়ারার আবদুন নুরকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠেন শাহজালাল। পরে ফাইনালে অংশ নেন শাহজালাল ও জীবন। এক মিনিট চলা ফাইনাল রাউন্ডে জীবনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন শাহজালাল।
৩৫ বছর ধরে এই খেলা পরিচালনা করে আসছেন সাবেক চসিক কাউন্সিলর আবদুল মালেক। তিনি আগামী বছর থেকে আর খেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন না বলে মাঠে ঘোষণা দেন।
এবারের খেলায় নবীন বলীরা যেমন অংশ নিয়েছেন, তেমনই ছিলেন প্রবীণরাও। হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামের মো. মফিজ এবং নগরীর উত্তর পতেঙ্গার খাজা আহমেদ ৭০ বছর পেরিয়েও অংশ নিয়েছেন বলীখেলায়। খাজা আহমেদের সঙ্গে লড়েছেন তার দুই ছেলে সেলিম ও কাইয়ুম বাদশা। কাইয়ুম প্রথমবার অংশ নিলেও ১০ বছর ধরে লড়ছেন তার ভাই সেলিম।
বিকালে খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।
খেলায় চ্যাম্পিয়ন শাহজালালকে ক্রেস্ট ও নগদ ২৫ হাজার টাকা এবং রানার্সআপ জীবনকে ক্রেস্ট ও নগদ ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া তৃতীয় স্থান অধিকারকারীকে ১৫ হাজার, চতুর্থ স্থান অধিকারকারীকে আট হাজার এবং প্রথম রাউন্ডে জয়ী সবাইকে ক্রেস্ট ও নগদ দেড় হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়।
বিজয়ী শাহজালাল বলী বলেন, ‘আমি ২৩ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিচ্ছি। গতবার রানার্সআপ হয়েছিলাম। এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। খুব ভালো লাগছে। আমি ফল বিক্রেতা। পুরস্কারের কিছু টাকা দিয়ে মায়ের জন্য একটি শাড়ি কিনবো। বাকি টাকা ব্যবসায় লাগাবো।’
মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, ‘১৯০৯ সালে এই মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালে দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার ১১১ ও ১১২তম আসর বাতিল করা হয়।’
জানা গেছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুবকদের সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলীখেলা। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি ১২ বৈশাখ লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জব্বারের বলীখেলা। খেলা ঘিরে লালদীঘির আশপাশের প্রায় কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
৬ ক্রিকেটারকে দেশের জার্সি ছাড়তে আইপিএল দলগুলোর বড় প্রস্তাব!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।