জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকার অন্যান্য জায়গার মতো কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে ধানমণ্ডির সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সংঘর্ষ চলছিল। দিনটি গত ১৯ জুলাই। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়। বিকেল ৫টায় সেখানেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সহকর্মী ও বন্ধুরা তাঁর মরদেহ পান।
প্রিয় ঢাকায় থাকলেও তাঁর পরিবারের বাস রংপুর শহরে। মা শামসী আরা জামান আর চার বছরের মেয়ে পদ্মপ্রিয় পারমিতাকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। প্রিয়র চলে যাওয়ার পর রংপুরেই দাদি-নাতনি বাস করছেন এখন।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করে গণ-অভ্যুত্থানের গানের অনুষ্ঠান ‘আওয়াজ উড়া’। সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা জামান।
সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা বলেন, ‘ও জীবনটা গুছিয়ে এনেছিল। মেয়েকে স্কুলে দিয়েছিল।
ঢাকায় নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। একটা স্বপ্ন ছিল। এখন ওর ছোট্ট সন্তানটাকে বড় করাই আমার স্বপ্ন। ওর মতো ছেলেদের জন্য আমি সুস্থ-সুন্দর একটা সমাজ চাই।’
তাহির জামান প্রিয়র কথা বলতে গিয়ে মা বলেন, তাঁর ছেলে প্রচুর বই পড়তেন।
দেশ-জগতের খবর রাখতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্র নির্মাণের। তাহির জামান প্রিয়কে দাফনের তিন দিন পর রাত ৩টায় তাঁদের রংপুরের বাসার দরজা ভেঙে প্রচুর পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করেছে বলে জানান শামসী আরা জামান।
পুলিশ কেন এসেছে, সে ব্যাপারে কিছু বলেনি। তবে শামসী আরা জামান মনে করেন, তাঁকে ভয় দেখানোর জন্যই পুলিশ এসেছিল। এর কিছুদিন পর খবর আসে, পুলিশ তাঁকেও তুলে নিয়ে যেতে পারে। ছোট নাতনি আর ৯ বছরের মেয়েকে নিয়ে তখন ভয়ের ভেতর বসবাস করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রিয়র চার বছরের মেয়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার ছোট্ট নাতিটাকে স্কুলে নিয়ে যাই, সামনে পুলিশের গাড়ি দেখলে ও রিকশায় দাঁড়িয়ে বলে, ‘তোমরা আমার বাবাকে মেরেছ! তোমরা ভালো না, পচা!’ আমি ওর কথাটা শুনে অবাক হই। রিকশা এগিয়ে নিয়ে গেলে, সেনা সদস্যরা বলেন, আমরা তোমার বাবাকে মারিনি।”
শামসী আরা জামান জানান, একদিন তিনি মেয়েটাকে নিয়ে কোথাও গেছেন। সেখানে দুজন পুলিশ অফিসার হোটেলে ঢোকেন। এটা দেখে তাহিরের মেয়েও পুলিশের পিছে পিছে যেতে চায়। কেন যাচ্ছো—জানতে চাইলে বলে, ‘ওদেরকে জিজ্ঞেস করব কেন আমার বাবাকে মেরেছে। আমার প্রিয় বাবা আমার কাছে আসে না। প্রিয় বাবা আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে।’
শামসী আরা জামান জানান, তিনি ঢাকায় আসার আগের দিন তাহির জামান প্রিয়র মেয়ে পদ্মপ্রিয় পারমিতা অনেক কান্না করেছে। কাঁদতে কাঁদতে সে বলছিল, ‘আমি আমার প্রিয় বাবার কাছে যাব। প্রিয় বাবাকে নিয়ে আসব। প্রিয় বাবা আমাকে আর ঘাড়ে নেয় না।’
শামসী আরা জামান বলেন, মেয়েটি সবাইকে বলে তার প্রিয় বাবা মারা গেছে। কিন্তু মাঝে মাঝে সে নিজেই বুঝতে চায় না যে বাবা আর নেই। এ সময় ছেলে ও নাতির কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।