জুমবাংলা ডেস্ক : ত্রিশজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, মেয়র, ডাক্তার, ব্যবস্থাপক কর্মী, ক্রীড়া চ্যাম্পিয়ন এবং সাধারণ নাগরিক ১০-১১ মে ভ্যাটিকান সিটিতে আয়োজিত মানব ভ্রাতৃত্বের জন্য দ্বিতীয় বিশ্ব সভার জন্য জড়ো হন। পরিবেশ, শিক্ষা, ব্যবসা, কৃষি, মিডিয়া এবং স্বাস্থ্যে মানব ভ্রাতৃত্বের প্রচারের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে ওই বিশ্ব সভায় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে বাংলাদেশের শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী গুয়াতেমালা থেকে ড. রিগোবার্তা মেনচু তুম সভাপতিত্ব করেন।
গোলটেবিল আলোচনার সূচনা করে ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অফ স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্রো প্যারোলিন বলেন, মানুষ যখন শান্তিকে অসম্মান করে এবং যুদ্ধ চালায়, “তারা নিজেদের জন্য এমন একটি দিক নির্ধারণ করে যা সৃষ্টির বিরোধিতা করে । এবং মানুষকে হত্যা করে তারা কেবল অন্যদের মর্যাদাকে আঘাত করে না বরং নিজেদেরও সম্মানহানী করে”।
অনুষ্ঠানের শান্তি গোলটেবিল বৈঠক থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় “গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, হত্যা বন্ধ করতে এবং মানবিক সহায়তার নিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য” আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি ইসরায়েল এবং একটি ফিলিস্তিনের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পাশাপাশি জেরুজালেম শহরের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নিশ্চিত বিশেষ মর্যাদাকে দৃঢ়তার সাথে অনুসরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিরা অবশেষে শান্তি এবং নিরাপত্তায় বসবাস করতে পারে।’’
মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেন যে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো তৈরির সময় মানুষ নিজেদের সম্পর্কে যেভাবে চিন্তা করে তা মানবতার জন্য অস্ত্রের চেয়েও বেশি বড় হুমকি। “আমাদের ভাগ করে নেওয়া এবং যত্ন নেওয়ার মানবিক মূল্যবোধের সাথে মানুষ হিসাবে নিজেদেরকে নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ভিত্তি তৈরি করতে হবে যা তিনটি শূন্যের একটি নতুন সভ্যতা–শূন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং শূন্য বেকারত্ব, তৈরি করতে নিজেদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। এটা আমাদের করতে হবে আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতে সামাজিক ব্যবসার ধারণা এবং অনুশীলনকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে”। ইউনূস বিশেষ করে বর্তমান সভ্যতার “মুনাফা সর্বোচ্চকরণ” নীতি যার মাধ্যমে একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া হিসাবে মানুষকে “চাকরি সন্ধানকারী” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে । তার কারণে মুষ্টিমেয় মুনাফা অর্জনকারীদের তাদের সম্পদ ক্রমাগতভাবে আকাশচুম্বি করে যাচ্ছে।
অংশগ্রহণকারীরা ১১ মে একটি একান্ত সভায় পোপ ফ্রান্সিসের সাথে দেখা করেন। মানব ভ্রাতৃত্বের দ্বিতীয় বিশ্ব সভায় প্রায় ৩৫০ জন অংশগ্রহণকারীকে সম্বোধন করে পোপ ফ্রান্সিস তাদের একটি বিচ্ছিন্ন বিশ্বে মানব ভ্রাতৃত্বকে উন্নীত করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায়ের জন্য উৎসাহিত করেন।
পোপ বলেন, “যুদ্ধ একটি প্রতারণা-যুদ্ধ সর্বদাই পরাজয়। ঠিক যেমন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ধারণা ভয়ের প্রতিবন্ধকতার উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটাও একটা প্রতারণা। দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই সাধারণ মানবতার স্বীকৃতিতে ফিরে যেতে হবে এবং জনগণের জীবনের কেন্দ্রে ভ্রাতৃত্বকে স্থান দিতে হবে। শুধুমাত্র এইভাবে আমরা মানব পরিবারকে একটি ভবিষ্যত দিতে সক্ষম সহাবস্থানের মডেল তৈরি করতে সফল হব। রাজনৈতিক শান্তির জন্য প্রয়োজন হৃদয়ের শান্তি, যাতে মানুষ এই আত্মবিশ্বাসে একত্রিত হতে পারে যে জীবন সর্বদা সব ধরনের মৃত্যুকে জয় করে।” তিনি যোগ করে বলেন, “আমাদের মেনে নিতে হবে যে যুদ্ধ সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট, এটি ঈশ্বর প্রদত্ত নয়। এর মানে আমাদের পূর্বাবস্থায় ফেরানোর ক্ষমতা আছে, আমাদের যুক্তি পরিবর্তন করার ক্ষমতা আছে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।