লাইফস্টাইল ডেস্ক : দুর্ঘটনাবশত গরম পানিতে অথবা উত্তপ্ত আয়রনে অথবা অন্য কোনো উপায়ে একজন মানুষের ত্বক পুড়ে যেতে পারে। কারো ত্বক পুড়ে গেলে তার প্রথম চিন্তা এটা হতে পারে যে, পোড়া স্থানে কি প্রয়োগ করলে ব্যথা প্রশমিত হবে এবং অতিরিক্ত ড্যামেজ এড়ানো যাবে। বেশিরভাগ মানুষ জানেন যে পোড়া ত্বকে বরফ দেওয়া ভালো, কিন্তু বরফ ছাড়াও আরো কিছু ঘরোয়া উপায়ে শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশের চিকিৎসা করা যায়।
এ প্রতিবেদনে পোড়া ত্বকের জন্য কিছু বিস্ময়কর ঘরোয়া চিকিৎসা আলোচনা করা হলো, কিন্তু গুরুতর পোড়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করবেন না।
* বরফের পরিবর্তে অ্যালোভেরা
রফ পোড়া ত্বকে রক্তপ্রবাহ সীমিত করে এবং টিস্যুকে আরো ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু আপনি বরফের পরিবর্তেঅ্যালোভেরাও ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমত, পুড়ে যাওয়া স্থানকে ঠান্ডা পানির ধারার নিচে রাখুন- এর ফলে ইনজুরিটি ছড়াবে না। সম্ভব হলে এভাবে অন্তত ২০ মিনিট রাখুন। এরপর তাজা অ্যালোভেরার জেল প্রয়োগ করুন- এটি সম্ভবত পোড়া ত্বকের জন্য সবচেয়ে পরিচিত ঘরোয়া চিকিৎসা, যা ব্যথা, প্রদাহ ও ফোলা উপশম করে এবং ত্বকের বিকাশ ও মেরামতের জন্য উদ্দীপনা যোগায়।
* ভ্যানিলা
ছোটখাট পোড়ার ক্ষেত্রে ভ্যানিলার নির্যাস ব্যবহার করতে পারেন। দগ্ধ ত্বকের ওপর ভ্যানিলার নির্যাস প্রয়োগ করতে কটন সোয়াব ব্যবহার করুন। ভ্যানিলার নির্যাসে বিদ্যমান অ্যালকোহলের বাষ্পীভবন পোড়া ত্বককে শীতল করবে ও ব্যথা উপশম করবে।
* টি ব্যাগ
ব্ল্যাক টি-তে ট্যানিন অ্যাসিড থাকে, যা পোড়া ত্বক থেকে তাপ শোষণ করে ব্যথার মাত্রা কমাতে পারে। যেভাবে পোড়া স্থানে টি ব্যাগ ব্যবহার করবেন: পোড়া ত্বকের ওপর দুই থেকে তিনটি ঠান্ডা, ভেজা ব্ল্যাক টি ব্যাগ রাখুন এবং ব্যাগগুলোকে পোড়া স্থানে ধরে রাখতে গজ বা পট্টি ব্যবহার করুন।
* হোয়াইট ভিনেগার
হোয়াইট ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে। অ্যাসিটিক অ্যাসিড হলো অ্যাসপিরিনের একটি উপকরণ, যা পোড়া ত্বকের ব্যথা, চুলকানি ও প্রদাহ উপশমে সহায়ক। হোয়াইট ভিনেগার অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসেবেও কাজ করে, তাই এটি পোড়া স্থানে ব্যবহার করলে ইনফেকশন প্রতিরোধ হবে। হোয়াইট ভিনেগার দগ্ধ স্থান থেকে তাপও টেনে নেয়, যার ফলে ব্যথা নিস্তেজ হয়ে যায়। প্রশান্তিদায়ক সেঁকের জন্য হোয়াইট ভিনেগার ও পানির দ্রবণে পেপার টাওয়েল ভেজান অথবা কটন সোয়াবের মাধ্যমে হোয়াইট ভিনেগার প্রয়োগ করুন।
* মধু
গলা ব্যথার চিকিৎসায় মধু বিখ্যাত। মধু হলো একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক যা পোড়া ত্বককে ইনফেকশন থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। এটির প্রাকৃতিক পিএইচ ভারসাম্য রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রতিকূল, তাই এটি টপিক্যালি ব্যবহার করলে ত্বকে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস হবে। মধু পোড়া স্থানকে শীতল ও ব্যথামুক্ত করে এবং নিরাময়ে অবদান রাখে।
* দুধ
দুধের ফ্যাট ও প্রোটিন কনটেন্ট পোড়া ত্বকে আরাম দেয় ও নিরাময় দ্রুত করে। দ্রুত উপশমের জন্য পোড়া ত্বককে ১৫ মিনিট দুধে ভিজিয়ে রাখুন। কোনো চর্বি অপসারণ করা হয়নি এমন দুধের দইও আপনার দগ্ধ ত্বককে শীতল ও আর্দ্র করতে পারে।
* ওটস
ওটসে উপস্থিত উপাদান ত্বকে আরাম দেয় ও প্রদাহ হ্রাস করে। শরীরের পোড়া স্থান নিরাময় ও চুলকানির প্রবণতা রোধের জন্য ওটসের দ্রবণ বেশ কার্যকর হতে পারে। বড়সড় পোড়ায় আরাম পেতে আপনার গোসলের পানিতে এককাপ ওটস মিশিয়ে দগ্ধ স্থানটিকে ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। ছোটখাট পোড়ার ক্ষেত্রে একটি ছোট বাটিতে পানি নিয়ে কিছু ওটস মিশিয়ে পোড়া ত্বককে ভিজিয়ে রাখুন। ত্বককে বায়ুতে শুকিয়ে নিন যেন ত্বকে ওটসের পাতলা আস্তরণ লেগে থাকে- এটি চুলকানি হ্রাস করবে। আরো উপশমের জন্য গোসলের পানিতে বেকিং সোডা বা বাইকার্বনেট অব সোডাও মেশাতে পারেন- এটি ত্বকের প্রদাহ কমাবে।
* নারকেল তেল
নারকেল তেল হলো ত্বক নিরাময়কারী ভিটামিন ই এর একটি চমৎকার উৎস। এই তেলে ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকে যা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, এর ফলে পোড়া ত্বকে ইনফেকশন হয় না। গরম তরলে ত্বক পুড়ে গেলে নারকেল তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে দগ্ধ স্থানের ওপর ম্যাসাজ করুন। লেবুর রসের অম্লীয় উপাদান পোড়া দাগ দূর করবে, অন্যদিকে নারকেল তেল নিরাময়ে সাহায্য করবে। নিশ্চিত হোন যে আপনার নারকেল তেল ১০০% বিশুদ্ধ।
* ল্যাভেন্ডার অয়েল
উনিশ শতকের প্রথমদিকে একজন ফ্রেঞ্চ কেমিস্ট আবিষ্কার করেছেন যে, ল্যাভেন্ডার অয়েলের নিরাময় শক্তি রয়েছে। একবার একটি ল্যাব দুর্ঘটনায় তার হাত খুব দগ্ধ হয় এবং তিনি পোড়া স্থানটিকে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েলে ভিজিয়ে নেন। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন যে এতে ব্যথা উপশম হয়েছে ও পোড়া স্থানটি দ্রুত নিরাময় হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত উপায়ে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করবেন যেভাবে: একটি মিস্টিং বোতলে এক চা-চামচ বিশুদ্ধ ল্যাভেন্ডার অয়েল ও ২ আউন্স পানি নিয়ে ঝাঁকুন, তারপর প্রয়োজনানুসারে পোড়া ত্বকের ওপর স্প্রে করুন।
* ভিটামিন সি এবং ই
ভিটামিন সি ক্ষত নিরাময় ও কোলাজেন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। কোলাজেন হলো নতুন ত্বকের জন্য বেস ম্যাটারিয়াল। অন্যদিকে ভিটামিন ই হলো একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বক মেরামত ও সুরক্ষায় সহায়ক। পোড়া ত্বকের নিরাময় দ্রুত করতে একটি ঘরোয়া চিকিৎসা হলো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অথবা এক সপ্তাহের জন্য এ দুটো ভিটামিনের সাপ্লিমেন্ট সেবন করা (প্রতিদিন ২,০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ১,০০০ আইইউ ভিটামিন ই)।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।