ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যার রায় ঘোষণার পর দুপুরে ধানমন্ডিতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মামলাটির তদন্তের নানা বিষয়ে আলোচনা করেন পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটাই হয়েছে। আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে মেধা দিয়ে কাজ করেছি। প্রত্যেকের পরিবারে নুসরাত আছে, আমরা সে ভাবনা নিয়ে কাজ করেছি।’
ডিআইজি বনজ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি একটি নির্ভুল চার্জশিট দিতে। মামলা প্রমাণের জন্য যা যা প্রয়োজন সবগুলো প্রয়োগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমাদের যেসব সদস্য তদন্ত ও অপারেশনের জড়িত ছিলেন, আমরা তাদের কনভিন্স করতে পেরেছি যে অপরাধীদের শাস্তি হওয়া উচিত। আমাদের পরিবারেও এমন হতে পারে এটা আমরা বোঝাতে পেরেছি। একটা নির্ভুল বিচার হলে সমাজের সব ক্ষেত্রে একটা বহুমুখী প্রভাব পড়তে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমরা যতদূর পেরেছি আমরা চেষ্টা করেছি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে হয় এবং আমরা সেটা পেয়েছি।’
পিবিআই প্রধান আরো বলেন, ‘নুসরাতকে ঢাকায় আনার আগেই ফেনীতে তার একটি বক্তব্যের ভিডিও করেছিল স্বজনরা। আমরা তার সেই ভিডিওটি সংগ্রহ করি, ওটাকেই সত্য ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করি। পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমরা দুইজন নারী অফিসার পাঠিয়ে তার জবানবন্দি নেই।’
‘ঘুরে-ফিরে নুসরাত এই কয়েকজনের নামই বলছিল। এর পর ২-৩ দিনের মধ্যে নুর উদ্দিন ও শামীমকে গ্রেফতার করি। তাদের থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করি। কারণ হত্যাকাণ্ডটি মাদরাসার ভেতরে হয়। বাইরের কেউ জানতো না, দেখেওনি। তাই যারা ভেতরে ছিল একে একে তাদের গ্রেফতার করে তথ্য সংগ্রহ করি আমরা।’
ডিআইজি বনজ বলেন, ‘আমার কর্মজীবনে কখনও এমন ঘটনা তদন্ত করিনি বা দেখিনি যে কেউ কারাগারে বসে একজন হত্যার পরিকল্পনা এবং হুকুম দিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে তদন্তের সময় আমরাও নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। তবে আমরা যাদের জবানবন্দি নিয়েছি তাদের কথায় অধ্যক্ষের পরিকল্পনার কথাটি উঠে আসে। আমরা এসব তথ্য নিয়ে আমাদের এসআইসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছি। নিখুঁতভাবে প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়ে সবার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি আমরা।’
প্রসঙ্গত, ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।
এ ছাড়া নুসরাত হত্যার ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে তিরস্কার করেছেন আদালত। মামলার রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে বিচারক এ তিরস্কার করেন।
আদালত বলেন, এ ঘটনায় তৎকালীন ওসি গাফিলতি করেছেন। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর না ঘটে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেন আদালত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।