জুমবাংলা ডেস্ক : পাঠক সমালোচকদের প্রশংসায় ভাসছে তরুণ প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল কথাসাহিত্যিক রবিউল করিম মৃদুলের নতুন উপন্যাস ‘জলমিছরি’। মেলায় আসার পর থেকেই বইটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে পাঠকদের মধ্যে। যারা পড়ছেন, ভূয়সী প্রশংসা করছেন বইটির।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পাঠকদের বিভিন্ন গ্রুপে দারুণ সব পাঠপ্রতিক্রিয়া জমা পড়ছে। বইপোকাদের আড্ডাখানা গ্রুপে এক প্রতিযোগীতার মাধ্যমে পাণ্ডুলিপি পাঠের সুযোগ পেয়ে ইসরাত শারমিন তৃণা নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘গল্পের খাতিরে আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপের সাথে এর অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবন জীবিকার বাস্তব রূপগুলো যেন লেখক নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে এঁকেছেন সুনিপুণ ভাবে।
কোন লেখনীর আবেদন পাঠকের মনে ঠিক কতোটা সারা ফেললে কোন পাঠক সে জিনিস গুলোর বাস্তব রূপ নিজের জীবনেও দেখতে চাইবে? আমিও তেমনি এ গল্পটার মোহে এতোটাই আকৃষ্ট হয়েছি আমার কয়েক বেলার খাবারের মেনুতে গল্পে উল্লেখিত খাবার গুলো খাওয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা। মূল কাহিনির সাথে পারিপার্শ্বিক বর্ণনা গুলো গল্পটাকে যেন অলংকৃত করে গেছে। কিছু বর্ণনার ধরন এতোটাই সুখপাঠ্য ছিলো যে সেগুলো পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো আর একটা নতুন গল্প যেন তার দিকে টেনে নিচ্ছে আমাকে।
এর মধ্যে কিছু এমন ছিলো যা পড়ে জীবনে প্রথমবার নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম অভিজ্ঞতার অনুভূতি এতোটাই তৃপ্তি দায়ক ছিলো বাস্তবে এগুলো না দেখলেও আর আক্ষেপ থাকবে না’ শারমিন লিমা লিখেছেন, ‘খুব ভালো একটা সময় কেটেছে জলমিছরির সাথে৷ প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই কাহিনীটা আমাকে শেষ পর্যন্ত টেনেছে। পাঠকদের উদ্দেশ্য বলতে পারি যারা সামাজিক গ্রাম বাংলার উপন্যাসগুলো যত সময় নিয়ে কাহিনীর প্রত্যেকটা লাইন অনুভব করে পড়তে পারবেন তাদের কাছেই এই জনরার বইগুলো এক একটা মাস্টারপিছ মনে হবে। জলমিছরিও সেই ধাঁচের একটা বই।’
সাকিব এ জামি লিখেছেন, “জলমিছরি” মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। লেখকের সাবলীল লেখনশৈলী যেন গ্রামীণ এক পরিবেশে বেঁধে রেখেছে প্রতিনিয়ত। যেই পরিবেশে মমত্ববোধ আছে, আছে হারানোর হাহাকার। রাজনীতি, ষড়যন্ত্রও এখানে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। গ্রামীণ এই পরিবেশের বর্ণনা লেখকের লেখাতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কখনও ধানক্ষেতের আইল ধরে ছুটে ছিলাম, কখনো বা বক শিকার কিংবা ওলাবিবির কারণে যে টানাপোড়েন— ঠিক সেখানেই যেন ছুটে গিয়েছিলাম। সংলাপের ক্ষেত্রে লেখক দারুণ কাজ দেখিয়েছেন। ভিন্ন এক সংলাপের ভাষায় আঞ্চলিক যে টান লেখক রেখেছেন, তা প্রশংসনীয়।”
তাসলিমা আক্তার অনন্যা লিখেছেন “উপন্যাস হতে হয় জীবনের প্রতিচ্ছবি, যা পড়লে পাঠকদের হৃদয়ে দোলা দিবে, দৃশ্যপটে ভেসে উঠবে শুভ্র পাতায় লেখা কৃষ্ণ হরফের শব্দের গাঁথুনিতে গড়ে ওঠা কাহিনী। রবিউল করিম মৃদুল রচিত “জলমিছরি” বইটিও সেরকমই উপলব্ধিসম্পন্ন একটি উপন্যাস, যা আমাকে কেবল রোমাঞ্চকর অনুভূতির সাথেই পরিচয় করায়নি বরং আমাকে ভাসিয়ে নিয়েছিল গত হওয়া গ্রামীণ জীবনে। আমার শৈশবের তিন বছর কাটে গ্রামে নানুবাড়িতে। ফলশ্রুতিতে গ্রামীণ আবহ আমাকে এখনও টানে। ইচ্ছে করে কংক্রিটের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে নিজেকে মুক্ত করে ছুটে যাই আমার স্নিগ্ধ গ্রামে। যেখানে ঘুঘুদহের মতো মেলা হবে, মাটির চুলায় রান্না হবে, বেতফল খাওয়া, আনন্দ করে বিলে বক ধরা ইত্যাদি। যদিও আমি বক ধরা দেখিনি, দেখেছিলাম ডাহুক ধরা তবুও হাফিজুলের সাথে আসাদ ও পরীর বক ধরার পটভূমি দৃশ্যায়নে লেখক এতটাই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন যে ক্ষণিকের জন্য চোখ বন্ধ করলেই সবটা যেন ভেসে উঠছিল চোখের সামনে। উপন্যাসের ভাষাশৈলী ছিল অনন্য। ঘটনার পাশাপাশি চরিত্রদের উপস্থাপন ও পারিপার্শ্বিকতা বর্ণনায় লেখক দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এতে করে মনে হয়েছে উপন্যাসটি পাঠকের কাছে কেবল গলাধঃকরণের মতো উপভোগ্য, আনন্দসঞ্চারী না হয়ে উপলব্ধি বোধসম্পন্ন। ফলে উপন্যাসটি পাঠের সময় আমার পাঠক হৃদয় নিজেকে হারিয়েছে চরিত্রদের মাঝে যেন নিজেই উপস্থিত ছিলাম এই উপন্যাসে।”
আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাণ ও প্রকৃতির ঘ্রাণমাখা এ উপন্যাস প্রকাশ করেছে উপকথা প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন অনন্যা চক্রবর্তী। ২৮০ পৃষ্ঠার এ বইটির মূল্য ৪৯৫ টাকা। বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে ৫৬৪ নম্বর স্টলে। এরইমধ্যে বিভিন্ন বয়সী পাঠকের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে বইটি। বইমেলায় বিক্রিও হচ্ছে বেশ। পাঠক-সমালোচকদের প্রশংসায় ভাসছে জলমিছরি।
জলমিছরি’র লেখক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মৃদুল বলেন, ‘কাদামাটির ঘ্রাণমাখা গল্প জলমিছরি। এ বইটিতে হারাতে বসা গ্রাম ও গ্রামীণ মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনকে নতুনভাবে অনুভব করবে পাঠক। বিশেষ করে যাদের শৈশব-কৈশোর গ্রামে কেটেছে বা গ্রামীণ জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখেছে, দারুণভাবে আলোড়িত হবে তারা। গ্রামের যে চিরায়ত সৌন্দর্য তা অনেকটা সামনাসামনি দেখার আনন্দ পাবে। আর যাদের কখনোই গ্রামে থাকা হয়নি, তারা বিস্মিত হবে বৈচিত্র্যময় গ্রামীণ জীবন ও মানব সম্পর্কের নানা টানাপোড়েনের গল্প পড়ে। বর্তমান সময়ে এ ধরনের গল্প সাধারণত লেখে না কেউ। কারণ এ ধরনের গল্প পড়ার জন্য যে নিমগ্ন পাঠক দরকার, তা এখন কম। তবুও আমি এ গল্প লেখার সাহস করেছি। এরইমধ্যে যারা পড়েছেন, তারা ভূয়সী প্রশংসা করছেন বইটার। অন্যদেরও নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। বইটা নিয়ে আমি দারুণ আশাবাদী।’
অমর একুশে বইমেলায় পাঠক বইটা সংগ্রহ করতে পারবেন উপকথা প্রকাশনের ৫৬৪ নম্বর স্টল থেকে। এ ছাড়া রকমারি, বইফেরি, বুকলিসহ বিভিন্ন অনলাইন বুকশপে অর্ডার করে ঘরে বসেই বইটা পেতে পারেন। জলমিছরিসহ উপন্যাস, গল্প, কবিতা মিলিয়ে মৃদুলের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২। গতবছর মহাবীর খালিদ ইবনে ওয়ালিদের জীবনীভিত্তিক ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘খালিদ’ লিখে দারুণ আলোচিত হন মৃদুল। তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘জলপাই রঙের কোট’ এবং ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস ‘ঘানি’, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে রচিত ‘হত্যার শিল্পকলা’ পাঠকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। মৃদুলের প্রকাশিত অন্যান্য বইগুলোর মধ্যে উপন্যাস ‘ফুলন’, ‘এখানে আকাশ নীল’, ‘শুভ্র কুসুম কৃষ্ণ কুসুম’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।