আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্কুলছাত্রীকে ‘অপহরণ’ করে এক তরুণ। তারপর ছাত্রীর পরিবারের কাছে চাওয়া হয় মুক্তিপণ। আর ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করতে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করল পুলিশ। তারপর গ্রেফতার করা হয় সেই তরুণকে।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট এলাকায়।
প্রেমের অভিনয় করে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে সুজয় হাজরা নামে এক তরুণ। তারপর চাওয়া হয় মুক্তিপণ। এ কারণে ওই কিশোরীকে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহাসড়কের পাশে একটি হোটেলে লুকিয়ে রেখেছিল সুজয়।
এ খবর শুনে নিউ আলিপুর থানার পুলিশকর্মীরা দম্পতির ছদ্মবেশে গিয়ে বসিরহাটের ওই খাবার হোটেলে অভিযান করে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে। সঙ্গে অভিযুক্ত তরুণ সুজয় হাজরাকেও পুলিশ গ্রেফতার করে। রোববার (১০ জানুয়ারি) সুজয়কে আদালতে তোলা হলে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইল ছবিতে এক সুদর্শন তরুণের ছবি দেখেই প্রেমে পড়ে যায় দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরের এম টি লেনের বাসিন্দা ওই ছাত্রী। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই ছাত্রীকে অপহরণের ছক কষে সুজয়।
কিন্তু ওই ছাত্রী বুঝতে পারে যে ছবিটি ভুয়া। তবুও তরুণের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যায় সে। গত শুক্রবার হঠাৎ ওই ছাত্রী লাপাত্তা হয়ে যায়। এরপর নিউ আলিপুর থানার পুলিশ অপহরণের তদন্ত শুরু করে।
তদন্তের একপর্যায়ে ওই কিশোরীর মোবাইল নেটওয়ার্ক মেলে বসিরহাটে। নিউ আলিপুর থানার ওসি অমিতশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুলিশের টিম বসিরহাটে যায়। আর তরুণের শেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক মেলে হাওড়ায়। তখন পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, হাওড়ায় দেখা করে দুজন চলে গেছে বসিরহাটে।
এর মধ্যেই কিশোরীর কাকাকে একজন ফোন করে বলে, ‘আপনাদের বাড়ির মেয়ে কি হারিয়ে গেছে? আমরা খুঁজে দেব। কিন্তু ভালো টাকা দিতে হবে।’ এই তথ্য পেয়ে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ফোনের নেটওয়ার্কটি বসিরহাটে। কিন্তু পুলিশের টিম তদন্ত করে দেখে, ফোনের মালিক বয়স্ক এক ব্যক্তি।
বয়স্ক ওই ব্যক্তি জানান, অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণ নিজের ফোন হারিয়ে গেছে বলে একটি কল করার জন্য তার ফোনটি চায়। এবার পুলিশ নিঃসন্দেহ হয়ে কিশোরীর ছবি নিয়ে বসিরহাটের প্রত্যেকটি হোটেলে তল্লাশি চালায়।
একটি হোটেলের মালিক জানান, ওই কিশোরীর ‘স্বামী’ হোটেলে একটি ঘর ভাড়া নিয়েছে। দম্পতি সেজে এক পুলিশকর্মী ও এক মহিলা পুলিশকর্মী ওই ঘরটিতে যান। ওই কিশোরীই দরজা খোলে। জানায়, তার নতুন বিয়ে হয়েছে। ‘স্বামী’ গেছে বাজারে। গল্প করার ছলে ফাঁদ পাতে ছদ্মবেশী পুলিশ। ওই তরুণ হোটেলে আসামাত্রই তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
পুলিশের জেরার মুখে সুজয় জানিয়েছে, এই প্রেম আসলে প্রতারণার ফাঁদ ছিল। বিয়ে করে সংসার পাতার আগেই বাড়ির লোকজনকে ডেকে নিয়ে এসে প্রথমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় সে ও তার সঙ্গীরা। এরপর সেই ‘অপহৃত’ তরুণী বা ছাত্রীকে তুলে দেয় পরিবারের লোকদের হাতে।
মেয়েকে পাওয়ার পর তারাও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান না। এই ক্ষেত্রে নিউ আলিপুরের ওই পরিবারটির কাছ থেকেও টাকা হাতানোর ছক কষেছিল তারা। সুজয়কে জেরা করে এই ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।