আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হাইতি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের ক্যারাবিয়ান অঞ্চলের একটি দেশ। সরকারি নাম রিপাবলিক অব হাইতি। তাইনো-ইন্ডিয়ানরা দেশটির আদি আধিবাসী। ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর ক্রিস্টোফার কলম্বাস হাইতিতে পৌঁছান। তিনি এটাকে স্পেনের ভূখণ্ড দাবি করে নাম দেন- হিস্পানিওলা (অর্থ- স্পেনিশ আইল্যান্ড)।
১৯৬৭ সালে ‘রাইসওইক চুক্তি’র মাধ্যমে স্পেন তার অধিকৃত হিস্পানিওলার পশ্চিমের কিছু অংশ ফ্রান্সকে ছেড়ে দেয়। তারা এর নাম দেন সেন্ট ডোমিনিক। এ সেন্ট ডোমিনিকই বর্তমান হাইতি।
১৮০৪ সালের ১ জানুয়ারি হাইতি ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। হাইতিয়ান সংগ্রামী নেতা জন জ্যাকুইস ডেসালিন্স স্বাধীনতার পর সেন্ট ডোমিনিক নাম বদলিয়ে পূর্বনাম হাইতি রাখেন। হাইতি হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ শাসিত প্রথম স্বাধীন উপনিবেশ।
হাইতির মোট আয়তন ২৭ হাজার ৭৫০ বর্গকিলোমিটার বা ১৯ হাজার ৭১৪ বর্গমাইল। এর মোট জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। আয়তন বিবেচনায় হাইতি পৃথিবীর ১৪০তম বৃহত্তম দেশ।
হাইতি বিশ্বের অন্যতম একটি দরিদ্র রাষ্ট্র। দেশটির সিংহভাগ সম্পদের মালিকানা মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে কুক্ষিগত। বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বরাবরেই তালিকার ওপরের দিকে অবস্থান করে হাইতি। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ জুয়া খেলায় আসক্ত।
২০১৪ সালের একটি হিসাবমতে, হাইতির জিডিপি (পিপিপি) ১৮.৫৩৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ১,৭৭১ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, হাইতির হাইতির জিডিপি (নমিনাল) ৮.৯১৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৮৫২ ইউএস ডলার।
দেশটির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্স। সরকারি ভাষা ফ্রেঞ্চ ও হাইতিয়ান ক্রেয়োল। মুদ্রার নাম হাইতিয়ান গোর্দ। জনসংখ্যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ও ৫ শতাংশ মুলাটি ও শ্বেতাঙ্গ। কৃষ্ণাঙ্গরা ঔপনিবেশিক আমলে দাস হিসাবে আনা আফ্রিকানদের উত্তরসুরী। হাইতির নাগরিকদের হাইতিয়ান বলা হয়।
কিউবা ও ও ডোমিনিকান রিপাবলিকের পর হাইতি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। ১৯১৫ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত হাইতি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল।
১৮০৪-১৯১৫ সাল পর্যন্ত হাইতি ৭০ জন একনায়ক দ্বারা শাসিত হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, স্বৈরতন্ত্র এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে হাইতি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র একটি দেশ হয়ে উঠেছে।
দেশটিতে জীবনযাত্রা অনেক ব্যয়বহুল। এখানকার জনগণকে তাদের আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ খরচ করতে হয়, শুধু খাবারের পেছনে। এখানকার মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই অনেক অলস। তারা কাজ করার পরিবর্তে গল্প-গুজব ও আড্ডাতে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায়। এরা অনেক আমদপ্রিয়।
এই পাহাড়ি দেশটি একসময় অরণ্যে আবৃত ছিল। বেশির ভাগ গাছই কেটে ফেলা হয়েছে, যার ফলে মৃত্তিকার ক্ষয় ঘটেছে। পল্লী অঞ্চলে কৃষকেরা পাহাড়ের পাদদেশে ক্ষুদ্রাকার জমিতে চাষবাস করে। অপুষ্টি ও বেকারত্ব হাইতির বড় সমস্যা।
চিনি রিফাইনিং, আটা, টেক্সটাইল, সিমেন্ট, কফি, আম, ইক্ষু, চাল, কাঠ, প্রভৃতি জাতীয় আয়ের উৎস। প্রধান রপ্তানি দ্রব্য কফি, তেল ও কোকো। যুক্তরাষ্ট্র হাইতির বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।
হাইতিতে একটি দ্বীপ আছে। যে দ্বীপটি এক সময় জলদস্যুরা পুরোপুরি দখল করে নেয়। এই দ্বীপের পাশ দিয়ে যে জাহাজগুলো যাতায়াত করত সেগুলোতে লুটপাট চালাত ওই জলদস্যুরা।
পর্যটকদের জন্য এটি একটি বিপজ্জনক দেশ। কোনো পর্যটক সেখানে স্বাছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে না। ছিনতাইসহ নানা বিপদের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। এ কারণে কেউ সেখানে ঘুরতে যেতে চান না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।