জুমবাংলা ডেস্ক : দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন ডজন মামলার আসামি প্রতারক সিকদার লিটন। কিন্তু মেয়েটির পরিবার ওই বিয়ে মেনে না নেয়ায় লিটন তার শ্বশুরের নামে ঠুকে দেন হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা। এরপর বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে তিনি হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। লিটনের ক্রমাগত অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা একবার তাকে পুলিশে দিতেও বাধ্য হন।
প্রতারক সিকদার লিটন র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান তার শ্বশুর জাপান মুন্সি।
জাপান মুন্সি বলেন, ‘ও (লিটন) আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। আমরা এই বিয়ে মেনে নেয়নি। মেয়ের সন্তান হওয়ার একদিন পর লিটন আমাদের বাড়িতে এসেছিল। তখন তো আর ফেলে দিতে পারি না। বাধ্য হয়ে জায়গা দিয়েছিলাম। পরে লিটন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হাতে-পায়ে ধরেছিল, যাতে আমরা তাকে মেনে নেয়। কিন্তু আমি সম্পর্ক মেনে নেয়নি। আমার একটি মাত্র মেয়ে; আমি দেখে শুনে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা করতে পারিনি।’
জাপান মুন্সি আরও বলেন, ‘লিটন কী করে আমরা তা জানি না। মাঝে-মধ্যে সাংবাদিক পরিচয় দিতো। কিন্তু কোন পত্রিকায় কাজ করত, পত্রিকার কী নাম তা বলত না। আমার মেয়ে জানতে চাইলে লিটন তাকে মারধর করত। আমি ফোনে অনেকবার লিটনকে বলেছি-তোমার চোখ আছে, কান আছে; হাত-পা আছে আয় করে খাও।’
এদিকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির ডজনখানেক মামলার আসামি লিটনকে সোমবার ভোরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-৮। একই দিন দুপুরে ঢাকায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সিআইডি তাকে নিয়ে দুই দফা অভিযান চালায়। এ সময় লিটনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ট্যাব, কম্পিউটার ও সিম উদ্ধার করা হয়।
বুধবার লিটনকে আদালতে তোলা হলে আদালত তার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি মামলাটি তদন্ত করছে।
এদিকে, প্রতারক লিটন গ্রেফতারের পর স্থানীয়রা মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেছে। এ সময় তারা লিটনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।
লিটনের শ্বশুর জাপান মুন্সি বলেন, আমার মেয়ে আমাদের কাছে চলে আসার কারণে লিটন আমাদের নামে কেস (মামলা) করেছিল। সেই মামলায় আমার এক ভাগ্নেও আসামি হয়েছিল। এ ঘটনার পর লিটনকে থানায় ধরিয়ে দিয়েছিলাম। পরে আবার ছাড়া পেয়ে আমাদের নানাভাবে সে হয়রানি করে। এরপর সে কোথায় থাকত, কী করত কিছুই জানতাম না। সে আমার মেয়েকে ভুল বুঝিয়েছে।
লিটনের স্ত্রী বলেন, ‘আমাকে সে বলেছে সাংবাদিকতা করে। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে মারধর করত। বলত ‘তোমার কাজ বাচ্চা মানুষ করা ও ঘর সামলানো।’
স্থানীয়রা জানায়, এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়িত নয় সিকদার লিটন। চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকি, সাইবার অপরাধসহ প্রায় ডজনখানেক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া নানান অভিযোগে লিটনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় দুই ডজনের বেশি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) আছে।
স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রতারক ও ছদ্মবেশী অপরাধী বলেই পরিচিত। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছের এই প্রতারক। এছাড়া বিভিন্ন সময় লিটন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়েছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি মো. আব্দুর রহমান, আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেন, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সাইফারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটান। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় সাইবার অপরাধে মামলাও হয়েছে।
সিআইডির সিনিয়র এএসপি (মিডিয়া) জিসানুল হক জিসান জানান, বর্তমানে সিকদার লিটন সিআইডির রিমান্ডে আছে। রিমান্ড শেষে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেবেন। তার বিরুদ্ধে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দ্রুতই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।