ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে তিন বছরের পুরোনো এয়ারগান মেরামতের ছবিসহ একটি লেখা পোস্ট করায় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বেকায়দায় পড়েছেন।
সম্প্রতি ‘ক্রাইম ফোকাস’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ফার্নিচার দোকানি রুহুল আমিনের একটি ছবি পোস্ট করা হয়। পোস্টে লেখা হয়, ‘ফার্নিচার দোকানি রুহুল আমিন একজন জঙ্গি ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার কাছে অনেক অস্ত্র সংরক্ষিত আছে।’
ছবি-সম্বলিত লেখাটি পোস্ট করার পরপরই ভাইরাল হয়ে যায়। রুহুল আমিনকে তার প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিন্ন চোখে দেখছেন। অনেকেই তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাছাড়া নানা ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ফার্নিচার দোকানি রুহুল আমিনকে।
অন্যদিকে ফেসবুকে ওই ছবি ও লেখা পোস্টের ঘটনায় আগরপুর বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী সবুজ ফরাজীকে দায়ী করে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছবির বিষয়ে ফার্নিচার দোকানি রুহুল আমিনের ভাষ্য, ‘প্রায় তিন বছর আগে আগরপুরের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম আতিকের এয়ারগানের কাঠের বাটটি ভেঙে যায়। তিনি কাঠের বাটটি লাগাতে এয়ারগানটি নিয়ে আমার কাছে আসেন। আমি তার এয়ারগানের কাঠের বাটটি লাগিয়ে দেই। তিনি মজুরি দিয়ে চলে যান। এ সময় কে বা কারা মোবাইলে এয়ারগানের কাঠের বাট লাগানোর ছবি তোলেন। কয়েক দিন আগে প্রায় তিন বছর আগের সেই ছবি ‘ক্রাইম ফোকাস’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে আমাকে জঙ্গি ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আগরপুর বাজারে আমার একটি ছোট দোকান আছে। সেখানে তেমন বেচাকেনা হয় না। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ করি। এতে কোনোভাবে আমার সংসার চলে। ঘটনার পর র্যাব-পুলিশ এসে নানা কথা জিজ্ঞেস করছে। ফেসবুকে ছবি ছড়িয়ে দেয়ার পর প্রতিবেশী-স্বজনরা আমাকে এড়িয়ে চলছেন। পরে এ ঘটনায় আমি গত ২২ নভেম্বর বাবুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লেখা আর ছবি পোস্ট করে আমাকে বিপদে ফেলতে চাচ্ছেন।’
অপরদিকে আগরপুর বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী সবুজ ফরাজী অভিযোগ করেন, ‘এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল ফসবুকে লেখা ও ছবি পোস্টের ঘটনায় আমাকে দায়ী করে এলাকা থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে তারা দোকানে গিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। এলাকা না ছাড়লে আমাকে সপরিবারে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি ও আমার পরিবার উদ্বিগ্ন।’
তিনি আরও বলেন, হুমকির পর তার দোকান বন্ধ রেখেছেন। নিরাপত্তা চেয়ে বাবুগঞ্জ থানায় ও বরিশাল র্যাব-৮ এর সদর দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর বলেন, ‘ফেসবুকে লেখা ও ছবি পোস্টের পর পুলিশের একটি দল তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে আতিকুল ইসলাম আতিক নামের এক ব্যক্তি এয়ারগানের কাঠের বাট মেরামত করিয়েছিলেন ফার্নিচার দোকানি রুহুল আমিনের কাছে। পরে এয়ারগানের মালিক আতিকুল ইসলাম আতিকের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করে। আতিক তার এয়ারগান ক্রয়ের রশিদ দেখিয়েছেন। এছাড়া এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ফার্নিচার দোকানি রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অস্ত্র কেনাবেচার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ‘ক্রাইম ফোকাস’ নামে ফেসবুক আইডি’ থেকে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে রুহুল আমিন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রাইম ফোকাস’ নামে ফেসবুক আইডি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আইডি খোলা হয়েছে। ওই আইডি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে আপত্তিকর প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আইডি পরিচালনাকরীদের শনাক্তে সিআইডি পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।