জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে সামাজিক মাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার নতুন নয়। কিন্তু এই প্রচারণা দিনে দিনে হয়ে উঠছে অভিনব। ইদানিং এসব জুয়ার বিজ্ঞাপনে যুক্ত হয়েছে ডিপফেক ভিডিও ও অডিও। এবার ফেসবুকে জুয়ার বিজ্ঞাপনে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ডিপফেক ভিডিও ও অডিও ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্লাটফর্ম ডিসমিসল্যাব গত সেপ্টেম্বর থেকে এমন ৯টি আলাদা ডিপফেক ভিডিও খুঁজে পেয়েছে, যা শুধু মাত্র ফেসবুকে শতাধিক বার বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। এসব বিজ্ঞাপনের আধেয়তে বিভিন্ন জুয়া ও বেটিং অ্যাপে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিনিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতার মিথ্যা দাবি করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের মুখ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে, যেখানে তাকে জুয়া খেলার জন্য আহ্বান জানাতে দেখা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেসবুক বিজ্ঞাপনগুলো নানা কারণে সমস্যাজনক: প্রথমত, মেটার নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী যেসব দেশে জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখানো যায় সেই তালিকায় বাংলাদেশ নেই; দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে অনলাইনে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে; তৃতীয়ত, বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বিকৃত এবং এআই টুল দিয়ে তৈরি। আর এভাবে আদালতের নির্দেশ এবং মেটার একাধিক নীতিমালা ভঙ্গ করে প্লাটফর্মটিতে জুয়ার প্রচারণা চলছে এবং তাদের বিজ্ঞাপন পর্যালোচনা ব্যবস্থা এসব বিজ্ঞাপনকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
আগস্টের শুরুতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জুয়ার বিজ্ঞাপনগুলোতে এসব রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। একটি ভিডিওতে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা ক্যাসিনোর জয়ের পরিমাণ কমিয়ে দেখানোর জন্য অতিরিক্ত কারাদণ্ড পাবেন। তিনি বাংলাদেশে ক্যাসিনোগুলোকে তাদের জয় কমাতে বাধ্য করেছিলেন, যাতে মানুষ শুধু কম বেতনের চাকরি থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। মুহাম্মদ ইউনূস এই আইনটি বাতিল করেছেন।’
আরেক ভিডিওতে বলা হয়েছে, ‘মুহাম্মদ ইউনূস এখন অনলাইন ক্যাসিনোগুলি বৈধ করেছেন এবং জয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ যাচাইয়ে দেখা যায়, আরটিভির সংবাদ উপস্থাপক সৈয়দা সাদিয়া বেনজিরের ফুটেজ কেটে তার উপর সময় টিভির লোগো বসিয়ে বিজ্ঞাপনটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ব্যবসা বন্ধ করলে ভারতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
এসব ভিডিওর কোনোটিতে ড. ইউনূসকে বলতে শোনা যায় যে, তিনি বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বেকারত্বের সমস্যা সমাধানে একটি গেমিং অ্যাপ তৈরি করেছেন, যা ব্যবহারে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব। কোনো কোনো বিজ্ঞাপনে ছাত্র আন্দোলন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়। সংবাদ বুলেটিনের আদলে তৈরি এসব বিজ্ঞাপনে ‘সময় টিভি’ ও ‘চ্যানেল ২৪’ এর লোগো জুড়ে দেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব ভিডিওর প্রতিটিকে ভুয়া বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে মেটার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।