জুমবাংলা ডেস্ক : আলমগীর হোসেন (৪৪) নামের এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় ইতালি প্রবাসী আবু বাকারের স্ত্রী সাদেকা সুলতানার। সেই পরিচয় থেকেই কৌশলে প্রথমে ম্যানেজার হিসেবে তার বাসায় চাকরি নেন আলমগীর।
পর্যায়ক্রমে পছন্দমতো শ্বশুরবাড়ি এলাকার পূর্বপরিচিত ওহাব ও সাহাদত নামের দুই বন্ধুকে চাকরি দেন ম্যানেজার আলমগীর। তাদের সবার বাড়িই নাটোরের গুরুদাসপুরে। তার কথামতো না চলায় শাহাদত নামের ওই যুবককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় কৌশলী প্রতারক আলমগীর। এরপর শুরু হয় তার অপকর্মের মিশন।
সাদেকা সুলতানা (৪৭) অসুস্থ থাকায় বিভিন্নভাবে তাকে প্রলোভন দেখিয়ে তার নিজনামীয় সম্পত্তি থেকে ১০ শতক জমি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হিসেবে দলিল করে নেয় সে। এর মধ্যে ৬ শতক জায়গা বিক্রি করে পায় দুই কোটি টাকা। বাকি জমির উপর বহুতল ভবন নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে সুকৌশলে সাদেকা সুলতানার কাছে স্বামীর কষ্টার্জিত গচ্ছিত ৯০ লাখ টাকাও নিয়ে নেয় ওই প্রতারক আলমগীর। এভাবেই প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় আলমগীর ও ওহাব।
এভাবেই কথাগুলো ভিডিও কলে বলেন ইতালি প্রবাসী আবু বাকারের অসুস্থ স্ত্রী সাদেকা সুলতানা।
আলমগীর নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের মৃত মোকসেদ মাস্টারের জামাতা। ওহাব একই উপজেলার চাচকৈড় তালুকদারপাড়া নূর বক্সের ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় তিন কোটি টাকা প্রতারণা করে আত্মসাতের অভিযোগে ওই প্রবাসীর স্ত্রী মোছা. সাদেকা সুলতানা (৪৭) বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর আদালতে ১২৭/২০২৩ একটি সিআর মামলা করেছেন। মামলাটি ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পিবিআইয়ের অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে। মামলার পূর্বে দুটি সাধারণ ডায়েরিও করা ছিল থানায়।
মামলার প্রধান আসামি আলমগীর হোসেন (৪৪) কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার তিলকান্দ্রা গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। বৈবাহিক সূত্রে তিনি গুরুদাসপুর উপজেলার শ্রীপুর মৃত মোকসেদ মাস্টারের মেয়েকে বিয়ে করে ওই বাড়িতেই বর্তমানে বসবাস করছেন।
বাদী মোছা. সাদেকা সুলতানা ঢাকা নিউমার্কেট এলাকার মিরপুর রোডের স্কয়ার টাওয়ারে বসবাসরত মৃত আইয়ুব আলী মোল্লার মেয়ে ও ইতালি প্রবাসী মো. আবু বাকারের স্ত্রী।
সাদেকার স্বামী ইতালি প্রবাসী আবু বাকার বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসকে আবেদনের মাধ্যমে অবহিত করেছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, কোনো ভালো চাকরি না করেই কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান। অথচ ওই আলমগীর মাত্র ১৫ হাজার টাকা বেতনে মামলার বাদীর বাড়িতে ম্যানেজারি করেছেন। মামলা হওয়ার পর তিনি দ্রুত দেশত্যাগের চেষ্টাও করেছেন বলে জানা গেছে। গুরুদাসপুরের অত্যাধুনিক বাড়ি-গাড়ি জমি ও বিশাল অংকের ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে তার স্ত্রী ডলির নামে। এছাড়াও তার নামে বনপাড়ায় মূল্যবান ৬ শতক জমি রয়েছে।
সম্পদের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদকের ক্যামেরার সামনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি আলমগীর। তবে মোবাইল ফোনে জানান, বাদী সাদেকা সুলতানার জমিসংক্রান্ত অনেক কাজ করে দেওয়ায় আমাকে এই জমি লিখে দিয়েছিলেন। ওই জমির ৬ শতাংশ ৯৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে ৭৫ লাখ টাকা পেয়েছি মাত্র।
অপর আসামি ওহাব বলেন, আমি ওই বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলাম মাত্র। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
চাকরিচ্যুত কেয়ারটেকার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি অনেক দিন ওই বাসার কাজ করেছি। আলমগীর ও ওহাবের জমি লিখে নেওয়ার পরামর্শ শুনতাম। আমি তাদের অবৈধ কাজে সমর্থন না দেওয়ায় আমাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী সাদেকা সুলতানা ও তার স্বামী ইতালি প্রবাসী আবু বাকার জানান, আসামি আলমগীর প্রতারণা করে নগদ টাকা ও জমিসহ তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমার স্ত্রী অসুস্থ, তার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। তারা আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন প্রশাসনের কাছে।
ঢাকা মেট্রো উত্তর পুলিশ পরিদর্শক (পিবিআই) মো. জুয়েল মিয়া মোবাইলে জানান, তদন্ত চলছে, শেষ হলে প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।