জুমবাংলা ডেস্ক: রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা চৌকি বসিয়ে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা শুরু করেছেন। ঈদের আগে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং আপাতত দিন যাপন করতে তাদের এই অস্থায়ী বসা।
বুধবার সকালে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডস্থল ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের খোলা জায়গায় এখন আর কোনো পোড়া স্তূপ নেই। নেই টিন বা লোহা-লক্কর। বরং সেই জায়গা ইট বিছিয়ে বালু ছিটিয়ে সমতল করা হয়েছে। আর ১.৭৯ একরের সেই খোলা জায়গায় অস্থায়ী চৌকি বিছিয়ে বসতে শুরু করেছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে এখনো মাথার ওপর ত্রিপল বা অন্য কিছু দিতে দেখা যায়নি।
এদিন সকাল থেকে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা মাথায় করে চৌকি নিয়ে আসছেন। তারপর বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির দেখিয়ে দেওয়া জায়গায় সেই চৌকি পাতছেন। অগ্নিকাণ্ডের আগে যার যেখানে দোকান ছিল, সেখানেই চৌকি পেতেছেন তারা। কেউ কেউ চৌকি পাতার সঙ্গে সঙ্গে তাতে বিভিন্ন পোশাক সাজিয়ে বেচা-বিক্রিও শুরু করছেন। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সেটি তদারকি করতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর আনন্দ বাজারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব চৌকি কিনে এনেছেন তারা। একেকটি চৌকির আয়তন লম্বায় পাঁচ ফুট ও প্রস্থে সাড়ে তিন ফুট। মানভেদে একেকটি চৌকির দাম পড়েছে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। একজন ব্যবসায়ীকে আপাতত একটি চৌকি বসাতে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেটে দুই হাজার ৯৬১ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আপাতত দুই হাজার ৯৬১টি চৌকিই বসার পরিকল্পনা তাদের। যাতে কোনো ব্যবসায়ী বঞ্চিত না হন।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে লুঙ্গি, গেঞ্জি ও শীতের চাদরের দোকান ছিল মো. সিরাজুল ইসলামে। অগ্নিকাণ্ডে সৌরভ গার্মেন্টস নামের সেই দোকান পুড়ে যায়৷ ক্ষতি হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকার।
তিনি বলেন, আগুনে কিছুই বাঁচাতে পারিনি। এখন পার্টির থেকে বাকিতে পণ্য এনে এখানে অস্থায়ীভাবে বসবো। ঈদের আগে আমাদের ভালো ব্যবসা হতো। এখন সেটি না হলেও আপাতত খেয়ে পরে বাঁচার ব্যবস্থা হবে।
মো. দেলোয়ার নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, দোকান মালিক সমিতি ও সিটি কর্পোরেশন আমাদের এখানে অস্থায়ীভাবে বসতে দেওয়ায় অনেক উপকার হয়েছে৷ তা নাহলে ঈদের আগে না খেয়ে মরতে হতো।
মাথার ওপর ছায়া দেওয়ার মতো কিছু না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, আপাতত চৌকি বসানো হচ্ছে৷ তারপর মালিক সমিতি যদি মাথার ওপর ছায়া দেওয়ার মতো কিছু না ব্যবস্থা করে তাহলে নিজেরাই সেটি করবো।
এদিকে বেলা ১২টার দিকে ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী এই চৌকি বিছিয়ে ব্যবসা শুরুর কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আপাতত আমরা চৌকি বিছানোর কাজ করছি।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৪১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ৪৩টি ইউনিট যাওয়ার খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ৪৮টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপনের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।
আগুনে বঙ্গবাজার এলাকার মোট সাতটি মার্কেট পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চারটি পুরোপুরি ও তিনটি আংশিক। মার্কেটগুলো হলো- বঙ্গ ইসলামীয়া মার্কেট, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার মার্কেট, এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর শপিং কম্প্লেক্স, আদর্শ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট।
এই ঘটনায় ডিএসসিসির পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে মোট তিন হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা দুই হাজার ৯৬১ জন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।