জুমবাংলা ডেস্ক: বঙ্গভ্যাক্সসহ তিনটি টিকা বাংলাদেশে ট্রায়ালের অনুমতির জন্য শর্ত বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশে মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। এই শর্ত পূরণ করা হলে তাদের মানব দেহে ট্রায়াল চালানোর অনুমতি দেয়া হবে। খবর বিবিসি বাংলার।
বাংলাদেশের বঙ্গভ্যাক্স ছাড়াও ভারত ও চীনের দুইটি টিকা রয়েছে। যদিও বিদেশি এই দুটি টিকার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
বুধবার দুপুরে তারা এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
অনুমতি পেলে এই প্রথম বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কোন টিকার ট্রায়াল হবে।
এ বছরের ১৭ই জানুয়ারি নিজেদের উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ মানব দেহে পরীক্ষা চালানোর জন্য বিএমআরসির কাছে অনুমতি চেয়েছিল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক।
বিএমআরসির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোঃ রুহুল আমিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কয়েকটি শর্তে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে হিউম্যান ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
”সরাসরি অনুমতি দেয়া হয়েছে বলা যাবে না। শর্ত দেয়া হয়েছে। ভুল-ত্রুটি ঠিক করলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেবো। শর্ত পূরণ করলে অনুমতি দেয়া হবে।”
”শর্ত হলো, ফেজ ওয়ান ট্রায়ালের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির ওপর পরীক্ষা করতে হবে। এটা বিএমআরসির একটা নিয়ম। সেই নিয়ম মানলে আমরা অনুমতি দিতে পারবো।”
সেই নিয়ম অনুযায়ী, শিম্পাঞ্জি ও বানরের ওপরে টিকা প্রয়োগ করার পর সেটার কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সমস্ত কাগজপত্র বিএমআরসিতে জমা দিতে হবে। এরপরই প্রতিষ্ঠান মানব দেহের ওপর টিকার ট্রায়াল চালানোর অনুমতি পেতে পারবে।
তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীকে অচিরেই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি বাংলাদেশি-বঙ্গভ্যাক্স,অন্য দুটি বিদেশি।
আবেদনের সময় গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অনুমোদন পাওয়ার পরের সাত থেকে দশদিনের মধ্যে ঢাকার কোন একটি বেসরকারি হাসপাতালে শ’খানেক স্বেচ্ছাসেবকের উপর টিকাটি প্রয়োগ করা হবে ট্রায়ালের জন্য।
বিএমআরসি নীতিগত অনুমোদন পেলে কোন প্রতিষ্ঠান ট্রায়ালের জন্য ওষুধ প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে পারে।
সেখান থেকে অনুমোদন পেলে তখন মানব ট্রায়াল করা যায়। তবে টিকা হিসাবে পুরোপুরি অনুমোদন পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মান হিসাবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার তিনটি ট্রায়াল করতে হবে।
বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অন্যতম উপদেষ্টা মোস্তাক হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নানারকম বৈজ্ঞানিক সমস্যা, সরকারি সিদ্ধান্ত সব মিলিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল তো বাংলাদেশে শুরুই করা যায়নি।
”বাংলাদেশে টিকার গবেষণা হলে সেটা সক্ষমতা বাড়াবে, উৎপাদনে গেলে সেটা আরেকটা সফলতা আনবে। করোনাভাইরাসের এই অবস্থায় এটা আমাদের জন্য খুবই দরকার।” তিনি বলছেন।
ট্রায়ালটি কতদিন চলবে?
গ্লোব বায়োটেকের প্রধান নির্বাহী কাকন নাগ বলেন, ফেজ- ওয়ান এবং ফেজ-টু – এই দুটি ধাপের জন্য ট্রায়ালের অনুমোদনের আবেদন করা হয়েছে।
একটি ফেজ বা ধাপ শেষ হলে আরেকটি শুরু হবে। এই একটি ধাপ শেষ করতে হলে ৪০-৪৫ দিন লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রথম ধাপটি শেষ হওয়ার পর ফেজ-টু বা দ্বিতীয় ধাপটি শুরু হবে। তবে এর মধ্যে তথ্য মূল্যায়নের বিষয়টি রয়েছে বলেও জানান।
গ্লোব বায়োটক বলছে, এই ভ্যাকসিনটির একটি ক্যান্ডিডেটের প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ছবির ক্যাপশান,
গ্লোব বায়োটক বলছে, এই ভ্যাকসিনটির একটি ক্যান্ডিডেটের প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
টিকা আসতে কতদিন সময় লাগবে?
গত অক্টোবরে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. নাগ বলেছিলেন যে, ছয় মাসের মধ্যে টিকা ব্যবহারের জন্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
সে অনুযায়ী এরইমধ্যে প্রায় তিন মাস পেরিয়ে চার মাস হতে চললো। তবে এখনো টিকা উৎপাদন নয় বরং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেরও তিন থেকে চারটি ধাপ রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র দুটি ধাপের অনুমোদনের জন্য রবিবার আবেদন করা হয়েছে।
এই পর্যায়ে এসে টিকা বাজারে আসতে আর কতদিন লাগবে এমন প্রশ্নের উত্তরে মি. নাগ বলেন, এখনো টিকা উৎপাদন বিষয়ক ৫-৬ মাসের কাজই বাকি রয়েছে।
তিনি বলেন, “এর যে ব্যবস্থাপনাগুলি, এর অনুমোদনগুলি মাত্রাতিরিক্ত সময় লেগে যাচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু কেন সে বিষয়টি আমি জানি না।”
তিনি কিওরভ্যাক নামে জার্মানির একটি ভ্যাকসিনের উদাহরণ টেনে বলেন, এই ভ্যাকসিনটি বঙ্গভ্যাক্সের দুই সপ্তাহ পরে আবিষ্কার হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। সেদেশের সরকারের সহযোগিতায় ভ্যাকসিনটি এরইমধ্যে হিউম্যান ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভ্যাক্স এখনো হিউম্যান ট্রায়ালের মাত্র প্রথম ধাপ শুরু করার আবেদন করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।