অগ্নিকাণ্ড ও অন্যান্য ঝুঁকিতে থাকা রাজধানীর কয়েকটি মার্কেট ঈদের পর বন্ধ করে দেওয়া হবে। এসব মার্কেট জনসাধারণের জন্য যে ঝুঁকি তৈরি করছে, সেটা দীর্ঘদিন চলতে দেওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ কথা বলেছেন।
রোববার বিডিনিউজটুয়েন্টিফোরডটকম আয়োজিত ‘ইনসাইড আউট’ শীর্ষক টক শোতে সালমান এফ রহমান বলেন, ঢাকার কয়েকটি মার্কেট ঈদের পরপর বন্ধ করে দেওয়া হবে। যে সব মার্কেট আমরা অনিরাপদ মনে করছি, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন দুই-একটি মার্কেটের ব্যাপারে আমাদেরকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কোন কোন মার্কেট বন্ধ করা হতে পারে সেগুলোর নামোল্লেখ না করলেও সালমান এফ রহমান তার বক্তব্যে গাউছিয়া মার্কেটের কথা উল্লেখ করেন, যা ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত বিপনী এবং এরইমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে।
তিনি বলেন, পত্রিকায় পড়লাম আরেকটি মার্কেটের সবাই বলছেন যেটা খুব বেশি অনিরাপদ, তা হলো গাউছিয়া মার্কেট। কাজেই সেখানেও এরইমধ্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এখন ঈদের মৌসুম। ঈদের আগে এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়? আমরা কাজটি ঈদের পর করব। এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।
সরকার কেন এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ না নিয়ে কেবল নোটিশ পাঠাচ্ছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখানে কিছু করা সরকারের দায়িত্ব নয়। ভবনের মালিক ও সেখানকার ব্যবসায়ীদেরকেই সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। সরকার যা পারে তা হলো সেখানে গিয়ে মার্কেট বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু তাতে প্রবল বাধা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের যা করণীয়, সরকার তা করছে। কিন্তু এখানে কাজটি করতে হবে ব্যক্তিকে, যাকে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে, সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে বলা হচ্ছে কিন্তু তারা নিচ্ছেন না। এ অবস্থায়, যা আমি আগেই বলেছি, সমাধান করতে সরকারকে খুব কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু তখন আপনারা সবাই বলবেন যে সবকিছু খুব দ্রুত করছেন, কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন কিন্তু তার পরে কি হবে? কারণ এখানে অনেক মানুষের জীবিকার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে।
বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে দেশের শিল্প-কারখানাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কমিটির দায়িত্বেও আছেন। এ কমিটি পাঁচ হাজারের বেশি কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রায় ২০০ স্থাপনা চিহ্নিত করেছি, যেগুলো খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাদেরকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন নোটিশ পাঠানোর পরের ধাপ হলো আমাদেরকে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। আমরা তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিছু সময় দিয়েছি। তারা না করলে আমাদেরকেই স্থাপনাগুলো বন্ধ করতে হবে। তবে আমি আগেই বলেছি যে এটা হচ্ছে খুব কঠোর সিদ্ধান্ত। যে মুহূর্তে আপনি বন্ধ করে দিচ্ছেন, তখনই কর্মসংস্থান হারাচ্ছে, অর্থনৈতিক লোকসান হচ্ছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব, যা গার্মেন্টস সেক্টরে দেখা গেছে। গার্মেন্টস শিল্পে সমস্যা ছিল এবং আমরা সেগুলো সমাধান করেছি। অগ্নি নিরাপত্তা, ভিত্তি ও কাঠামোগত নিরাপত্তা নিয়ে এত কাজ হয়েছে যে এখন সবাই বলছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ কারখানা।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পাল্টা যুক্তি দেখান যে, অনেক বেশি বিনিয়োগ থাকায় গার্মেন্টস সেক্টরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। আমরা কোথা থেকে সেই অর্থ পাব, তারা প্রশ্ন করেন। অনেক বিনিয়োগ দরকার। এটা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংলাপের বিষয়। সরকারের কথা হচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু আপনারা অনিরাপদ পরিবেশে কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। আপনারা নিজেদের শ্রমিক-কর্মীদের ঝুঁকিতে ফেলছেন। আপনারা সাধারণ নাগরিকদের ঝুঁকিতে ফেলছেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা সেখানে আমাকে বলেছেন যে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এটা আরেক সমস্যা। মানুষ নিম্নমানের বৈদ্যুতিক ক্যাবল ব্যবহার করে, যা প্রায়ই শর্ট সার্কিটের কারণ হয়। বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড আসলে শর্ট সার্কিটিংয়ের কারণে হয়ে থাকে।
ঢাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ‘কঠিন’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আমরা এক্ষেত্রে সমাধানের জন্য দ্বিমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছি। একটা হচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বিস্তৃত করা হচ্ছে। একই সময়ে অনিরাপদ জায়গাগুলো শনাক্ত করে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কিছূ উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ঢাকার ঘিঞ্জি অবস্থা এবং পানির স্বল্পতা সমস্যা সৃষ্টি করছে। আগুন লাগলে আপনি পানি কোথায় পাবেন? ঢাকা শহরে অনেক পুকুর ছিল। সেগুলো ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।