জুমবাংলা ডেস্ক : নাজমা বেগমের (৫০) স্বামী আবুল কাসেম দিনমজুর। এক ছেলে ও স্বামী নিয়ে একটি মাটির তৈরি টিনের ঘরে বসবাস করতেন। বন্যার পানিতে ঘরটির তিন দিকের মাটির দেয়াল ভেঙে পড়েছে। বন্যার সময় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বর্তমানে চারদিক খোলা অবস্থায় রাতে ছোট ছেলে ও স্বামী নিয়ে বসবাস করছেন। ভয়ের মধ্যে রাত যাপন করেন। ঘরের যে মেরামত করবেন, সেই টাকা-পয়সা নেই। কিস্তিতে টাকা এনে সামান্য টমেটো চাষ করে তাঁদের সংসার চলত।
তাই ঘর সংস্কারের জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। নাজমা বেগমের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে।
একই গ্রামে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত নিঃসন্তান সাবিহা বেগমের (৪৫) মাটির ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে পাঁচ দিন ধরে আশ্রয় নিয়েছেন।
তার ঘরটি পুরো বিধ্বস্ত। ঘর মেরামতের সামর্থ্য নেই। স্বামী দিনমজুর। কৃষিকাজ করেন। খাওয়াদাওয়া নিয়েই চিন্তায় আছেন।
তার এখন ঘর ঠিক করার মতো অবস্থা নেই। কিভাবে ঘরটি নির্মাণ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অন্যের বাড়িতে কত দিন থাকা যায়, তা বলে কেঁদে ফেলেন তিনি।
গত সপ্তাহের বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও অনেকেই নিজ ঘরে উঠতে পারেনি। আবার অনেককে চারপাশ খোলা ঘরে রাতে ঘুমাতে হচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র পরিবার। অনেকে আছেন স্বজনদের বাড়িতে। তাঁরা ঘর সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য সরকারি সহায়তা পাওয়ার আশা করছেন। গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত আদমপুর ও ইসলামপুরের বনগাঁও, চাম্পারায় চা-বাগানের গেলে এমন দুর্দশার চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা আদমপুরের বনগাঁও গ্রামে চারটি ঘর পুরো বিধ্বস্ত ও তিনটি মাটির ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের তাজ মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম ভাঙা মাটির ঘরের খাটের ওপর বসে আছেন।
একই গ্রামের তাজ উদ্দিনের স্ত্রী সাবিহা বেগমের একই অবস্থা। মাটির ঘরটি বিধ্বস্ত দেখা যায়। আলাপকালে ক্ষতিগ্রস্ত সাবিহা জানান, তিনি চার দিন ধরে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ ঘরটি মেরামতে সহযোগিতা করছে না। তাঁর সামর্থ্য নেই। তিনি কবে যে নতুন ঘর বানাবেন তা বলতে পাচ্ছেন না। স্বামীও কোনো কাজ পাচ্ছেন না। এখন তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান।
এভাবে বনগাঁও গ্রামের সুন্দর মিয়া, রমজান আলীসহ আরো পাঁচটি ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের কোনাগাঁও, কুরমা, চাম্পারায় চা-বাগানে বন্যার পানিতে মাটি ও বেড়ার তৈরি কাঁচা ১০-১২টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে কুরুঞ্জী ও চাম্পারায় চা-বাগানে দরিদ্র চা শ্রমিকদের ঘর বেশি আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে। মাটির দেয়ালধসে পড়েছে। অনেককে আবার ভাঙা ঘরে কোনোমতে পর্দা দিয়ে থাকতে হচ্ছে।
কুরমা চা-বাগানের ক্ষতিগ্রস্ত মিরতিনা বিন বলেন, ‘আমার মাটির ঘরটি পানিতে ধসে গেছে। বাঁশ দিয়ে টিকিয়ে কোনোমতে বসবাস করছি।’
মিরতিনা বিনের মতো একই বাগানে আরো কয়েকটি পরিবারের বসতঘর ভাঙা অবস্থা রয়েছে। আলীনগর ইউনিয়নের আলীনগর, কামুদপুর, চিিলয়া ও মঙ্গলপুর গ্রামেও আরো পাঁচ-ছয়টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুরো উপজেলায় ৫০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা পেয়েছি। সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।
কমতে শুরু করেছে গোমতীর পানি, বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।