যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের শেলটনে অবস্থিত ওয়াইল্ড ফেলিড অ্যাডভোকেসি সেন্টারে ২০টি বড় বিড়ালজাতীয় প্রাণী মারা গেছে। গত নভেম্বররে শেষ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই বাঘগুলো মারা যায়। এই সেন্টারের পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা মার্ক ম্যাথিউস জানিয়েছেন, বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে বাঘগুলো মারা গেছে। মৃত বাঘগুলোর মধ্যে ছিল একটি বেঙ্গল টাইগার এবং চারটি কুগার।
ম্যাথিউস বললেন, ‘আমরা এর আগে এমন কিছু দেখিনি। এখানে প্রাণীরা সাধারণত বার্ধক্যের কারণে মারা যায়। এমন কোনো ভয়ংকর ভাইরাসে কখনো মরে না।’
তিনি আরও জানান, ‘তিনটি বিগ ক্যাট বা বড় বিড়ালজাতীয় প্রাণী এর মধ্যে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের আক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে। একটি প্রাণী এখনও গুরুতর অবস্থায় রয়েছে।’
ওই সেন্টার থেকে ২৭ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সংক্রমণের কারণে পুরো কেন্দ্রটি কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এটি বন্ধ থাকবে।
আশ্রয়কেন্দ্রে বার্ডফ্লু ভাইরাস প্রথম নভেম্বর মাসে কুগারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এই বিড়ালজাতীয় প্রাণীদের মধ্যে নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। কয়েকদিন পর অন্যান্য প্রজাতির বাঘের মধ্যেও দেখা যায় একই ধরনের উপসর্গ।
২৩ নভেম্বর প্রথম কুগারটি মারা যায়। ১৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ আফ্রিকান সার্ভালের মৃত্যু হয়। মৃত প্রাণীরা একসঙ্গে থাকত না। কয়েকটি প্রাণীর থাকার জায়গা ছিল দেয়াল দিয়ে আলাদা করা। একটি প্রাণী দেয়ালের এক পাশে, অন্যটি আরেক পাশে থাকত। তাই এদের মধ্যে সরাসরি মেলামেশা ছিল না।
ম্যাথিউস বলেছেন, ভাইরাসটি কীভাবে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে তা বের করা কঠিন। এটি বন্য পাখির মলের মাধ্যমে আসতে পারে। আবার খাবারের মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারে। নিরাপত্তার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ৮ হাজার পাউন্ড (৩,৬২৯ কেজি) খাবার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রটি জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ। জীবাণুমুক্ত করতে হবে সবগুলো থাকার জায়গা। যেকোনো জৈব পদার্থ সরিয়ে ফেলে এগুলো ব্যাগে ভরে পুড়িয়ে ফেলা হবে। এরপর আবারও জীবাণুমুক্ত করার পর বেশ কিছুদিন সেটি রাখতে হবে পর্যবেক্ষণে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিড়ালজাতীয় প্রাণী বার্ড ফ্লুতে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। ২০২০ সালে নতুন রূপে আসা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা(H5N1) ভাইরাস দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওয়াশিংটন ডিপার্টমেন্ট অব ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ জানিয়েছে, এ এবছর শরৎকালে এই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বন্য পাখিদের মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ল্যালাম কাউন্টি আরও দুটি কুগারের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। গত বছর সিউলে এ ধরনের প্রাণীকে কাঁচা হাঁসের মাংস দেওয়ার কারণে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবের দুটি ঘটনা ঘটেছে।
ওয়াইল্ড ফেলিড অ্যাডভোকেসি সেন্টার বড় বিড়ালজাতীয় প্রাণীদের জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয়স্থল। যে প্রাণীরা সঠিকভাবে যত্ন পায়নি বা মালিকেরা যত্ন নিতে পারছেন না, এমন প্রাণীদের এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়।
আশ্রয়কেন্দ্রে মৃত প্রাণীদের তালিকা
· হাফ-বেঙ্গল টাইগার টাবি
· চারটি কুগার: হুলিগান, হলি, হার্লি এবং হান্না ওয়াইওমিং
· আফ্রিকান কারাকাল ক্র্যাকল
· কানাডিয়ান লিনক্স: চাকি এবং পুচ’ব
· জিওফ্রয় বিড়াল মাউস
· বেঙ্গল টাইগার পেবলস
· ইউরেশিয়ান লিনক্স থাম্পার
· চারটি ববক্যাট ও পাঁচটি আফ্রিকান সার্ভাল।
ম্যাথিউস বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে ভাইরাসটির সংক্রমণ শেষ হয়েছে। আমরা এখন শুধু অসুস্থ বিড়ালটিকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।