জুমবাংলা ডেস্ক : বরিশালের মাছ বাজারে আগুন লেগেছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে মাছের রাজা ইলিশের দাম। সব শেষ বুধবারের বাজারেও আগের দিনের চেয়ে বিভিন্ন সাইজের ইলিশের দাম মণ প্রতি গড়ে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশীয় জাতের অন্যান্য মাছেও।
মাছ কিনতে গিয়ে দাম শুনে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ক্রেতাদের। বাজারে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম চড়া বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
সমুদ্রে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে বাজারে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের সরবরাহ বাড়বে এবং তখন দামও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ বছর রমজান থেকেই বরিশালের মাছের বাজার চড়া। রোজার শেষ দিকে ঈদের সময় আরেক দফা বাড়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম। ঈদের পর লাফিয়ে বাড়ছে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম।
বুধবার বরিশালের পাইকারি বাজারে স্থানীয় নদীর বড় সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭৭ হাজার টাকা মণ দরে। এর প্রভাবে বেড়েছে অন্যান্য মাছের দামও।
বরিশালের ইলিশ ব্যবসায়ী মো. আরিফুর রহমান জানান, বরিশালের বাজারে আগের দিন চেয়ে বুধবার সব ধরনের ইলিশের দাম মণ প্রতি ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা করে বেড়েছে। দেড় কেজি সাইজের প্রতিমণ ইলিশ পাইকারি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭৭ হাজার টাকায়। যা আগের দিন ছিল ৭২ হাজার টাকা।
বুধবার ১ কেজি ২০০ গ্রাম সাইজের প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭০ হাজার টাকা, কেজি সাইজের ইলিশ প্রতিমণ ৬৫ হাজার, রপ্তানিযোগ্য এলসি (৬শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম) সাইজ ৫২ হাজার, ভ্যালকা (৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রাম) ৪২ হাজার, গোটলা সাইজ ৩২ হাজার এবং জাঁটকা সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকা মণ দরে। এই ধরনের প্রতিটি সাইজের মাছ গতকাল মঙ্গলবারের বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা কমে।
এদিকে, ইলিশ বাজার চড়া হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে দেশী প্রজাতীয় অন্যান্য সকল মাছে। মঙ্গলবার রাতে তরকারিতে ব্যবহারযোগ্য দেশীয় চিংড়ি মাছ কেজি প্রতি ১ হাজার টাকা, ছোট (গুড়া) চিংড়ি ৮শ’ টাকা, মধ্যম সাইজের বেলে মাছ ১ হাজার, বড় সাইজের বেলে ১ হাজার ২শ’ টাকা, পোয়া মাছ ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, রামছোছ (তপসে) মাছ ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া দেশীয় রুই-কাতল, তেলাপিয়া সহ সব ধরনের মাছের গায়ে আগুন লেগেছে।
ক্রেতা আবুল কালাম হাওলাদার বলেন, ঈদের পর সাধারণত মাছের দাম কমে যায়। এবার ঈদের পর লাফিয়ে দাম বাড়ায় সব ধরনের মাছের দাম সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
মাছ ক্রেতা শিপলু খান জানান, ১ হাজার টাকা কেজি দরের চিংড়িং দিয়ে তরকারি খাওয়া অসম্ভব। এছাড়া অন্যান্য মাছের দামও অস্বাভাবিক।
বেসরকারি চাকরিজীবী কাওছার হোসেন বলেন, ২ দিন আগে তার স্ত্রী তরকারির চিংড়ি আনার তাগিদ দিয়েছিল। অস্বাভাবিক দাম হওয়ায় স্ত্রীকে চিংড়ি ছাড়াই তরকারি রান্না করতে বলেছেন।
আরেক চাকরিজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, বাসায় মেহমান আসায় বাধ্য হয়ে ২টি ইলিশ মাছ (মোট ১ হাজার ৬শ’ গ্রাম) কিনেছেন ২ হাজার ২শ’ টাকায় ৫০ টাকায়। এত দাম দিয়ে কখনও ইলিশ কেনেনি তিনি।
বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার এসোসিয়েশনের সদস্য মো. নাসির উদ্দিন জানান, অন্যান্য বছর এই সময়ে প্রতিদিন দেড় থেকে ২শ’ মণ ইলিশ আসতো মোকামে। আজ এসেছে মাত্র ১০ মণ ইলিশ। এর আগের দিন এসেছিল সর্বাধিক ৪০ মণ। এ কারণে ইলিশের দাম বেশি। যার প্রভাব পড়েছে অন্যান্য মাছে।
আড়তদার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, বর্ষা ও ঝড়-ঝঞ্চা হলে মাছের আহরণ বাড়ে। এবার বর্ষা বিলম্ব হওয়ায় মাছের আহরণ কম। নিষেধাজ্ঞার কারণে সামুদ্রিক মাছও আসছে না। এ কারণে সব ধরনের মাছের দাম বেশি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সমুদ্রে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। চাষের মাছও আহরিত হয়ে গেছে। নদীতেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে কম। এ কারণে মাছের দাম চড়া। জুনের শেষ দিকে অভ্যন্তরীণ নদীতে আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাবে। নিষেধাজ্ঞা শেষে সামুদ্রিক মাছের সরবরাহও বাড়বে। তখন সব ধরনের মাছের দাম কমবে বলে তিনি আশা করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।