বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশের সিনেমার একজন জনপ্রিয় নায়ক ও নৃত্য পরিচালক ইলিয়াস জাভেদ। তাঁর অভিনীত সিনেমা সর্বশেষ মুক্তি পায় প্রায় চার বছর আগে। এরপর আর তাকে নতুন কোনো সিনেমাতে অভিনয়ে দেখা যায়নি। কারণ এরপর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই অসুস্থ অবস্থা থেকে এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি।
রাজধানীর উত্তরায় তার নিজ বাসভবনে গত ২২ আগস্ট এক ঘরোয়া আড্ডায় মেতে উঠেন তিনি পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা নিয়ে। সেখানে যে বিষয়টি নতুন করে এই প্রজন্মের পাঠক, দর্শককে জানানো জরুরি তা হলো- চিত্রনায়ক জাভেদ যখন নিজেকে নাচে পারদর্শী করে তোলার জন্য তারই নৃত্যগুরু সাধু মহারাজের সঙ্গে ভারতে যান, সেই আসা-যাওয়ার সময়টাতে তিনি তার ভাগ্নেদের বলে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কোনো সুযোগ থাকলে যেন তাকেও সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়।
মূলত জাভেদের ভাগ্নেরা আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। সেই সময়টাতেই জাভেদের একবার সুযোগ আসে বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়ার। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর জাভেদ বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে ভারতে নাচের প্রশিক্ষণের জন্য আশীর্বাদ নিতে গেলে বঙ্গবন্ধু তাকে ‘বাংলার দীলিপ কুমার’ নামে অভিহিত করেছিলেন। সেই সময়ে এ বিষয়টি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে বেশ ছড়িয়ে পড়ে।
তখন থেকেই মূলত জাভেদকে ‘বাংলার দীলিপ কুমার’ নামে অভিহিত করা হয়। জাভেদের বয়স যখন মাত্র ১৪, সেই বয়সেই তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে পরিবারের সবাইকে ছেড়ে তারই ওস্তাদ সাধু মহারাজের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসেন। এখানে এসে তারই ওস্তাদের সঙ্গে সিদ্দিক বাজারে থাকতেন। সেই সময় ‘নয়া জিন্দেগী’ নামে এক সিনেমাতে অভিনয় করেন তিনি নাসিমা খান ও অঞ্জনার বিপরীতে। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি পায়নি। এরপর আরও বেশ কয়েকটি সিনেমাতে অভিনয় করেন তিনি। তবে ১৯৭০ সালের ৩০ জানুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত উর্দু সিনেমা মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘পায়েল’ সিনেমাতে দর্শক তাকে লুফে নেয়। এই সিনেমাতে আরও ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা। মূলত এই সিনেমাতে তাকে দেখতে দীলিপ কুমারের মতোই লাগত। ১৯৭০ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত নায়কদের মধ্যে জাভেদ ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। নিজে নাচতেন ও নায়িকাদের নাচিয়ে পর্দা কাঁপিয়ে তুলতেন। শাবানা, ববিতা, অঞ্জু ঘোষ, রোজিনা, সুজাতা, সুচরিতা প্রমুখ ছিলেন তার নায়িকা। ‘নিশান’ সিনেমাতে জাভেদের অভিনয় প্রমাণ করেছিল, তিনিও যে রঞ্জনের মতো এক দুঃসাহসিক নায়ক। নায়ক হিসেবেই নয়, নৃত্য পরিচালক হিসেবেও একসময় ছিল তার ব্যস্ততা।
জাভেদের জন্ম ১৯৪৪ সালে আফগানিস্তানে। পরে তারা পেশোয়ার হয়ে পাঞ্জাবে আসেন। শৈশবে তার প্রিয় নায়ক ছিলেন দিলীপ কুমার। ১৯৭৪ সালের পর থেকে জাভেদ ঢাকাই চলচ্চিত্রে আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেন। একে একে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন- মালকা বানু, অনেক দিন আগে, শাহাজাদা, রাজকুমারী চন্দ্রবান, সুলতানা ডাকু, আজো ভুলিনি, কাজল রেখা, সাহেব বিবি গোলাম, নিশান, বিজয়িনী সোনাভান, রূপের রানী, চোরের রাজা, তাজ ও তলোয়ার, নরম গরম, তিন বাহাদুর, জালিম, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, রাজিয়া সুলতানা, সতী কমলা, বাহারাম বাদশা, আলাদিন আলী বাবা, সিন্দাবাদ প্রভৃতি ছবিতে।
অভিনয়ের পাশাপাশি এসব সিনেমাতে নৃত্য পরিচালক হিসেবেও তিনি কাজ করেছিলেন। ‘মনের ঐ ছোট্ট ঘরে আগুন লেগেছে হায়রে’, ‘নাচো নাচো গো অঞ্জনা’, ‘চাকভুম চাকভুম চাঁদনী রাতে’, ‘মালকা বানুর দেশেরে বিয়ের বাজনা বাজেরে’, ‘ওরে ও বাঁশিওয়ালা’ ইত্যাদি জনপ্রিয় গানেরও নৃত্যপরিচালক ছিলেন তিনি। জাভেদ এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন- একসময় বছরের পর বছর মুক্তি পাওয়া প্রায় প্রতিটি ছবির নৃত্যপরিচালক ছিলেন তিনিই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।