আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি শীর্ষ সংস্থার কর্মকর্তাদের কমিটি দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জানিয়েছে, ইউএস স্টিলকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি জাপানি নিপ্পন স্টিলের কাছে বিক্রি করাটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কি না তারা এখনো এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
সংস্থাটির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ কারণে নিপ্পন স্টিলের দ্বারা ইউএস স্টিল অধিগ্রহণের ভবিষ্যৎ এখন বাইডেনের সিদ্ধান্তের ওপর ঝুলে আছে। সেই সঙ্গে শিল্পের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে দেশটির প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর। যদিও তিনি (বাইডেন) এটি আটকে দিতে পারেন বলে কমিটি আশঙ্কা করছে। খবর সিএনএনের।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, কয়েক মাস ধরে বাইডেন যুক্তি দিয়ে আসছেন যে কোম্পানিটি আমেরিকান মালিকানাধীন থাকা উচিত, যাতে দেশের ইস্পাতশিল্পের কর্মসংস্থান সুরক্ষিত থাকে। এর আগে কমিটির এই পর্যালোচনার তথ্য প্রথমে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়।
সিএনএন জানিয়েছে, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলা পর্যালোচনার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন ইনভেস্টমেন্ট কমিটি (সাধারণভাবে সিএফআইইউএস নামে পরিচিত) এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না যে চুক্তিটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কি না। যদিও এই চুক্তির বিষয়টি একটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
খবরে বলা হয়, কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি সাধারণত এই চুক্তি নিয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতামতকে প্রভাবিত করতে পারে। এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছে ট্রেজারি বিভাগ। এ ছাড়া কমিটিটি প্রেসিডেন্টের মন্ত্রিসভার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত, যারা জাতীয় নিরাপত্তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কমিটির ভেতরে শীর্ষ কর্মকর্তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। কারণ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন। তাদের এই বিরোধিতা চুক্তিটি যথাযথভাবে পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে কমিটির সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে বলে মনে করা হয়।
ইউএস স্টিল ও নিপ্পন উভয়েই দাবি করেছে, চুক্তিটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করছে না। কোম্পানি দুটি গত সোমবার রাতে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে, সিএফআইইউএস তাদের জানিয়েছে যে তারা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বিষয়টি বাইডেনের কাছে পাঠিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের আলোকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাইডেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে ইউএস স্টিলের শেয়ার গতকাল বুধবার প্রি-মার্কেট ট্রেডিংয়ে ৩ শতাংশ কমে গেছে। এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, ‘ইউএস স্টিল ও নিপ্পন স্টিলের মধ্যে হওয়া চুক্তি ইস্পাতশিল্পে উৎপাদন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার করে। এই কোম্পানিটি এমন একটি কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে অন্যতম। এই চুক্তি চীনের প্রতিযোগিতামূলক হুমকির বিরুদ্ধে স্টিল খাতে একটি জোট গড়ে তুলবে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের প্রত্যাশা হলো, প্রেসিডেন্ট বাইডেন সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন এবং এই চুক্তিটি অনুমোদন করবেন, যা স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আরও বাড়াবে।’
জাপানি নিপ্পন স্টিলের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে কোম্পানি অনুরোধ করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত যেকোনো উদ্বেগের সমাধান করতে আমরা যে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি, তার মধ্যে রয়েছে ইউএস স্টিলকে উন্নত করা, দেশের কর্মসংস্থানের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে গোটা আমেরিকার ইস্পাতশিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছি, সেগুলো বিবেচনা করার জন্য বাইডেনকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
সিএনএনের খবরে বলা হয়, নিপ্পন এক বছর আগে ইউএস স্টিল কিনতে সম্মত হয়েছিল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্লিভল্যান্ড ক্লিফস থেকে পাওয়া শত্রুতাপূর্ণ মূল্য প্রস্তাবের প্রায় দ্বিগুণ দামে কোম্পানিটি এটি কিনতে সম্মত হয়। চুক্তির অনুমোদন নিশ্চিত করার জন্য, নিপ্পন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ইউএস স্টিলের ব্যবসায় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি
দিয়েছে।
এদিকে সব আয়োজন সত্ত্বেও এই একীভূতকরণের বিষয়টি একটি বিতর্কিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ দুই দলের (সরকারি ও বিরোধী দল) রাজনীতিবিদরাই আমেরিকান উৎপাদন খাতকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের একটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান তথা অর্থনীতিতে একটা বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তবে ইউএস স্টিল বলেছে, এই চুক্তি কোম্পানির বিপদগ্রস্ত ব্যবসাকে শক্তিশালী করতে বিশেষ প্রয়োজন। কোম্পানিটি কয়েক দশক ধরে সস্তা বিদেশি ইস্পাত, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে বেশ সংগ্রাম করেও কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
ইউএস স্টিল সেপ্টেম্বরে জানিয়েছে, নিপ্পন যদি কোম্পানিটি অধিগ্রহণ না করে তাহলে তারা ইউনিয়নভুক্ত কর্মীদের নিয়ে তাদের কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। কোম্পানিটি আরও বলেছে, জাপানি প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছ থেকে প্রাপ্ত বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ তাদের নিজস্ব ক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমাণে কারখানাগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থাকে শক্তিশালী করবে।
খবরে বলা হয়, নিপ্পন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা পিটসবার্গের বাইরে ও ইন্ডিয়ানার গ্যারি শহরের ইউএস স্টিলের ইউনিয়নভুক্ত কারখানাগুলোতে প্রায় ২৭০ কোটি (২ দশমিক ৭০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। তবে এই চুক্তির পথে সিএফআইইউএস একমাত্র বাধা নয়; বরং যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগও সম্ভাব্য এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে ‘অনাস্থা’ জানিয়েছে।
সিএনএনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি এখনো স্পষ্ট নয় যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চুক্তিটি স্থায়ীভাবে বাতিল করবেন, নাকি দুই স্টিল কোম্পানিসহ ইউনাইটেড স্টিলওয়ার্কার্স ইউনিয়নকে এই চুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেবেন, যে আলোচনা ও সিদ্ধান্তগুলো সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
এদিকে আরও একটি আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে যে যদি বাইডেন সেই বিকল্প প্রস্তাবটি মেনে নেন, তা সত্ত্বেও ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর চুক্তিটি আটকে দিতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট (প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট) ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এই চুক্তি আটকে দেবেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘একটি সিরিজ ট্যাক্স ইনসেনটিভ ও ট্যারিফের মাধ্যমে আমরা ইউএস স্টিলকে শক্তিশালী ও বড় করে তুলব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।