আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন। তবে বাইডেনের আনুষ্ঠানিক অভিষেকের আগেই হোয়াইট হাউজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু হোয়াইট হাউজ নয়; রাজধানী ওয়াশিংটনও ছেড়ে যাবেন তিনি। এরইমধ্যে নিজের ঘনিষ্ঠদের এ ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। খবর আল জাজিরা ও রয়টার্স’র।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বাইডেনের শপথ গ্রহণের দিন অর্থাৎ আগামী বুধবার সকালে হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করবেন ট্রাম্প।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে না থাকার কথা অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকের আগেই ওয়াশিংটন ছেড়ে যাবেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্য অনুযায়ী, সাধারণত নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষক অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্টও উপস্থিত থাকেন। এর মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বার্তা দেওয়া হয়। হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের অভিষেকের সময়েও তৎকালীন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা উপস্থিত ছিলেন। তবে এবার ট্রাম্প না থাকলেও তার প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেকে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকে হাজির না হলেও নিজের বিদায় অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অবশ্য আগ্রহ রয়েছে ট্রাম্পের। ওয়াশিংটনের বাইরের ঘাঁটি জয়েন্ট বেইজ অ্যান্ড্রুজে এই অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। এই ঘাঁটিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানের সদর দফতর অবস্থিত।
বিদায় অনুষ্ঠানের পর ফ্লোরিডার পাম বিচে নিজের বিলাসবহুল মার-এ-লাগো রিসোর্টে পরবর্তী জীবন শুরু করবেন তিনি। এরইমধ্যে সেখানকার বেশকিছু স্টাফও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বর্তমানে হোয়াইট হাউজে কর্মরত কয়েকজন সহকারীও রয়েছেন।
এদিকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে ওয়াশিংটনে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জায়গায় জায়গায় দেওয়া হচ্ছে নিরাপত্তা বেষ্টনী। ধাপে ধাপে বন্ধ হচ্ছে সড়ক ও সাবস্টেশনগুলো। শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে সহিংসতা ঠেকাতে রাস্তায় টহল শুরু করেছে ন্যাশনাল গার্ডের সশস্ত্র সেনাসদস্যরা। পার্লামেন্ট ভবন ইউএস ক্যাপিটল ঘিরে ২০ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় এই সংখ্যা ছিল মাত্র আট হাজার।
এরইমধ্যে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমবার সিনেটে অভিশংসন আটকে গেলেও গত সপ্তাহে ক্যাপিটলের তাণ্ডবে উস্কানির দায়ে এবার তা অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থায় সমর্থকদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত সপ্তাহে ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন তাণ্ডবের পর ২৪ ঘণ্টা জুড়েই মোতায়েন থাকছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। দায়িত্ব পালনের পর অনেক সদস্যই বিশ্রাম নিতে সেখানেই খানিক ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। স্তুপাকারে জমা রাখা হয়েছে দাঙ্গা ঠেকানোর সরঞ্জাম আর গ্যাস মাস্ক। ভবনের বাইরে সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিচ্ছেন অনেক সদস্য।
গত শুক্রবার থেকে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা কংগ্রেস ভবনের বাইরে অবস্থান নিলেও ২০ জানুয়ারি শপথ অনুষ্ঠানের আগে আরও সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটনের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্তে।
শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির মধ্যেই এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, আরও বিক্ষোভের প্রস্তুতির খবরের আলোকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি অবশ্যই সহিংসতা, আইন ভঙ্গ এবং যে কোনও ধরনের তাণ্ডব বন্ধ রাখতে হবে। এগুলোর জন্য আমরা দাঁড়াচ্ছি না। এর জন্য আমেরিকাও দাঁড়াবেও না।
তারপরও সতর্কতার অংশ হিসেবে ক্যাপিটল ভবন ঘিরে নতুন বেষ্টনী নির্মাণ এবং অন্য নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভবনটি ঘিরে সাত ফুট উচু বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়েছে। ধাতব বাধা নির্মাণের পাশাপাশি ক্যাপিটল ভবন সংশ্লিষ্ট এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। ক্যাপিটলের আশপাশের সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস জানিয়েছে, সাময়িকভাবে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে ওয়াশিংটন মনুমেন্ট। মেয়র মুরিয়েল বাউসার দশণার্থীদের সেখানে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ওয়াশিংটন সাবওয়ে সিস্টেম জানিয়েছে, আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩টি স্টেশন বন্ধ থাকবে। এছাড়া তিনটি ব্যস্তততম ডাউনটাউন স্টেশনও বন্ধ রাখা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।