বাগেরহাটের আশ্রয়কেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ

জুমবাংলা ডেস্ক: প্রবল গতিতে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার খবর পেয়ে বাগেরহাটের চার উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। এছাড়া সুন্দরবন ভ্রমণে যাওয়া তিন হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটককে ফিরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে। খবর ইউএনবি’র।

ff-2

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কন্টোল রুম থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুল ইসলাম।

বন বিভাগ জানায়, আবহাওয়া অধিদপ্তর মোংলা সমুন্দবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় বাগেরহাটের উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

এদিকে সকাল থেকে বাগেরহাটে মাঝে মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। থেমে থেমে ধমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে, জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মাঝে ‘বুলবুল’ ভীতি কাজ করছে। বাগেরহাটে ২৩৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। ওই সব সাইক্লোন সেল্টার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। একই সাথে মানুষ তাদের গবাদি পশু ও মালামাল নিয়ে আসাতে পারবে সাইক্লোন সেল্টারে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, মোংলা বন্দর থেকে কয়েকটি নৌযান নিরাপদে রাখার জন্য খুলনায় পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং সুন্দরবন বিভাগ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী যেকোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। বিশেষ করে সিডর বিধ্বস্ত বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে আতংক বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

তিনি আরও জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদেরকে যেকোন উপায়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সাইক্লোন সেল্টার কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া মানুষের জন্য শুকনা খাবারসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে এবং জেলায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, পুলিশের পক্ষ থেকেও উপকূলবাসীকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হচ্ছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বিভিন্ন ধরনের ৩২টি নৌযান নিয়ে সুন্দরবনে ভ্রমণে যাওয়া তিন সহস্রাধিক পর্যটককে উপকূলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ওই সব পর্যটকরা বাগেরহাটের শরণখোলা এবং মোংলায় বিভিন্ন হোটেলসহ নিরাপদ স্থানে রয়েছে। বনের স্টাফরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সুন্দরবনের দুবলার চরে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। জোয়ারের স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুবলার চরে আশ্রয় কেন্দ্রে কয়েক শত জেলে আশ্রয় নিয়েছে। বন বিভাগ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি জানান।

মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার ফখর উদ্দিন জানান, মোংলা বন্দরে সব ধরনের জাহাজে মালামাল উঠা-নামার কাজ বন্ধ রয়েছে। বন্দর সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে মোংলা বন্দর থেকে কয়েকটি নৌযান নিরাপদে রাখার জন্য খুলনায় পাঠানো হয়েছে।

অন্য দিকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের দুবলার চরে অবস্থানরত কয়েক হাজার জেলে পরিবারে আতংক বিরাজ করছে। শুটকি মৌসুম শুরু হওয়ায় গত ১ নভেম্বর বন বিভাগ থেকে পাশ নিয়ে আট হাজার জেলে সাগর মোহনায় দুবলার চরে যায়। সেখানে তারা অস্থায়ী ঘর তৈরি করে অবস্থান করছে। বেশ কিছু ট্রলার নিয়ে কয়েক হাজার জেলে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে অবস্থান করছে বলে সুন্দরবন বিভাগ জানায়।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সাগর মোহনায় দুবলার চরে হিন্দুধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী শতবছরের রাস উৎসব স্থগিত করেছে আয়োজক কমিটি।

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *