আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাণিজ্যযুদ্ধ আবার শুরু হলে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সতর্ক করে সংস্থা জানায়, ‘পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এশিয়ার অর্থনীতিতে। এই শুল্ক আরোপের ফলে পণ্যের খরচ বাড়বে এবং সরবরাহব্যবস্থাও বিঘ্নিত হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসেবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে এশিয়া অঞ্চল।’
আইএমএফের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক সেবুতে অনুষ্ঠিত এক ফোরামে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত শুল্ক আরোপ নিয়ে। তার মতে, এমন পদক্ষেপ বিশ্ববাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করবে, রপ্তানিকারক দেশগুলোর প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রানীতি কঠোর করতে হবে।
সাম্প্রতিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে চীনের তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর জবাব এসেছে বেইজিং থেকেও। ফলে আবারও বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এবার নির্বাচনী প্রচারণায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে চীনের সব পণ্যে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম মেয়াদেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। তখন তার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল চীন। কিন্তু এবার তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, নির্বাচিত হলে এই বাণিজ্যযুদ্ধের পরিসর আরো বিস্তৃত হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছেই। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে কেবল চীন নয়, বরং বিশ্বের সব দেশই তার কঠোর বাণিজ্যনীতির কবলে পড়বে।
বিশেষ করে যুক্তরাজ্যসহ ধনী দেশগুলোর ওপর এই প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি এশিয়ার দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই বাস্তবতায় ট্রাম্পের সঙ্গে মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস। ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে, তার ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। আর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হবে ৬০ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি এমনকি ১০০ শতাংশও হতে পারে।
তুরস্কের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন প্ল্যাটফরর্মের নির্বাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলতার তুরান বলেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’-এর অর্থ হচ্ছে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আমেরিকার বাজারকে রক্ষা করা। ফলে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে শুধু চীন নয়, ইউরোপেরও চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘এটি আমেরিকার বাণিজ্যনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে দেবে, যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, বিশেষত ইউরোপ ও চীনের ক্ষেত্রে।’
এদিকে সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) কমার আভাস দিয়েছে আইএমএফ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গত মাসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এমন প্রাক্কলন করেছে আইএমএফ। চলতি অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে আইএমএফের আগের পূর্বাভাস ছিল ৬.৬ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতি আগেও ৯.৭ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।