জুমবাংলা ডেস্ক : আকলিমা খাতুন (২)। বাবা-মায়ের সঙ্গে ফিরছিল ঢাকায়। কিন্তু রোববার দুপুরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে ফেলেছে শিশু আকলিমা।
জীবনের পরম নির্ভরতার স্থান বাবা-মা দুজনকেই একসঙ্গে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল শিশুটি। সে নিজেও সুস্থ নয়, দুর্ঘটনায় সেও গুরুতর আহত হয়েছে। বড়াইগ্রাম হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসাধীন শিশুটির অবস্থা এখনো আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুরের কাছিকাটায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে বিলকিস খাতুন (২৫) নামের এক নারীসহ দুই বছরের দুটি শিশুকে জনৈক আব্দুর রাজ্জাক চিকিৎসার জন্য বড়াইগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে খবর পেয়ে স্বজনরা এসে বিলকিস ও তার ছেলে ত্বোহাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিয়ে গেলেও অপর শিশুটির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিলো না।
পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা শিশুটির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ফেসবুকে ছবিটি দেখে চিনতে পেরে শিশুটির চাচি লাবনী খাতুন হাসপাতালে ছুটে আসেন।
তিনি জানান, দুর্ঘটনায় শিশুটির পিতা আবু আফফান (৫২) ও মা আরিফা খাতুন (৩২) দুজনেই মারা গেছেন। আহত হয়েছে শিশু আকলিমা। তাদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে। আবু আফফান ঢাকার আশুলিয়া পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় দ্বিতীয় স্ত্রী আরিফা খাতুনকে নিয়ে থাকতেন আর ফেরি করে কুষ্টিয়ার তিলের খাজা বিক্রি করতেন। লকডাউনের কারণে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।
তিনি আরও জানান, লকডাউন শিথিল হওয়ার খবরে ঢাকা যাওয়ার জন্যই চেপে বসেন মাছ বিক্রি করার কাজে ব্যবহৃত পিকআপ গাড়িতে। পথে সড়ক দুর্ঘটনার নির্মম বলি হলেন তারা।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বড়াইগ্রাম হাসপাতালে বাবা-মা হারানো শিশুটিকে গ্রহণ করেন তার চাচি লাবনী খাতুন। এ সময় বড়াইগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক শামসুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডা. ইশরাত ফারজানা ও অপর চাচা তরিকুল ইসলামসহ সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মেয়েটির চাচা মালয়েশিয়া প্রবাসী ওবায়দুল হোসেনের স্ত্রী লাবনী খাতুন কান্না চাপতে চাপতে বলেন, জীবন শুরুর আগেই আদরের আকলিমা তার সবচেয়ে বড় আশ্রয় প্রিয় বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলল। খবর পেয়ে আমি শিশুটিকে নিতে এসেছি। এখন তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। আল্লাহর দয়ায় তাকে সুস্থ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব আমি।
বড়াইগ্রাম হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ইশরাত ফারজানা জানান, সন্ধ্যায় শিশুটির জ্ঞান ফিরেছে, তবে সে খুব কম সাড়া দিচ্ছে। তার বুকে গুরুতর আঘাত লেগেছে। আমরা তাকে সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়েছি। তবে আরও আগেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নেয়া দরকার ছিল, কিন্তু স্বজনদের সন্ধান না পাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত স্বজনদের খোঁজ পাওয়ায় শিশুটির দ্রুত উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছি।
বড়াইগ্রাম থানার এসআই শামসুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুর ২টার দিকে একটি পিকআপ কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে কাছিকাটা মোড় ঘুরতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের নিচে খাদে পড়ে দুই নারীসহ ৬ জন নিহত ও দুই শিশুসহ ৭ জন আহত হন।
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।