জুমবাংলা ডেস্ক : বাবুই পাখির বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই না, মানুষকে আত্মনির্ভশীল হতে উৎসাহ দেয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে বড় বড় গাছ নিধন ও পাখি শিকারের কারণে পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি। এক সময় গ্রামগঞ্জের উঁচু তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছে বাসা বাঁধলেও ওইসব গাছ বিলুপ্ত হওয়ায় বাবুই পাখিও হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতি থেকে।
খেজুরের পাতা, খড়, ধানের পাতা, ঝাউ ও কাশবন দিয়ে তালগাছের ঝুলন্ত পাতার সঙ্গে নিখুঁতভাবে বাসা বোনে বাবুই পাখি। রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বাড়িগ্রামসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে উঁচু উঁচু তালগাছে এখনও চোখে পড়ছে এ বাবুই পাখির বাসা। গ্রামাঞ্চলে অনেকের কাছে বাবুই পাখি শিল্পী বা কারিগর পাখি বলে পরিচিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার বানিবহের বাড়িগ্রাম আঞ্চলিক সড়কটির পাশে তালগাছে শৈল্পিক দক্ষতায় বাসা বেঁধেছে বাবুই পাখি। সেইসঙ্গে পাখির কিচির মিচির শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে এলাকা।
বাড়িগ্রামের বাসিন্দা কৃষক ফজলুর রহমান জানান, ছোট বেলায় তিনি প্রচুর বাবুই পাখির বাসা দেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে বাবুই পাখির বাসা দেখাই যায় না। গত কয়েক বছর ধরে তাদের গ্রামের কয়েকটি তালগাছে বাবুই পাখিন বাসা দেখছেন। পাখি ও পাখির বাসা দেখতে এবং কিচির মিচির শব্দ শুনতে খুবই ভালো লাগে।
গৃহিনী সালমা বেগম বলেন, তাদের বাড়ির সামনের তাল গাছে বাবুই পাখি বাসা বানিয়েছে। কিচির মিচির শব্দে সব সময় মুখরিত থাকে এলাকা। পাশের খেজুর গাছ থেকে পাতা এনে প্রতিনিয়ত বাবুই পাখি বাসা বানায়। বাতাসে পাতার সঙ্গে বাসাও দোলে, তখন দেখতে খুব ভালো লাগে। বাবুই পাখি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসে। ছবিও তুলে নিয়ে যায়।
সাংস্কৃতিককর্মী খোকন মাহমুদ জানান, দিন দিন তাল গাছ নিধন ও অবাধে পাখি শিকারের ফলে বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। তাই বড় বড় তাল গাছ রক্ষা ও নতুন করে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পাখি সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।
রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান বলেন, বাবুই পাখির জন্মগতভাবেই শৈল্পিক দক্ষতা থাকে। কিভাবে বাসা বাঁধবে এটা তারা তাদের মায়ের কাছ থেকেই শিখে নেয়। এই গুণ আর অন্য পাখির মধ্যে নেই। কেউ একে শিল্পী পাখি বলে। এরা সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে বলে তাদের সামাজিক পাখিও বলা হয়। বাবুই পাখি সাধারণত তাল অথবা খেজুর গাছে বাসা বাঁধে। কখনও কখনও তারা আখ ক্ষেতেও রাত্রীযাপন করে। এরা শস্য দানা, ধান, গম ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে।
তিনি বলেন, এ পাখির মধ্যে একটি বৈজ্ঞানিক গুণও আছে। পুরুষ পাখিরা বিশ্রামের জন্য বাসা বাঁধে আর নারী পাখিরা বাসা বাঁধে ডিম ফুটানো ও বাচ্চা সংরক্ষণের জন্য। যখন বাচ্চা ফোটার সময় হয় তখন মা পাখিরা এক টুকরা গোবর নিয়ে বাসায় রাখে। যাতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে বাচ্চাদের ক্ষতি করতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, তাল গাছ ও খেজুর গাছের সংখ্যা যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি কিছু মানুষ বুঝে না বুঝে পাখি শিকার করে। যেকারণে বাবুই পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। বৃক্ষ নিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায় না। পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র রক্ষার স্বার্থে পাখি নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাখিদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।