দীর্ঘ ৯ মাস পর বাড়ি ফিরলেন ফটো সাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজল। প্রথমে নিখোঁজ, পরে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান তিনি। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পান। কাজলের মুক্তির অপেক্ষায় স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি, ছেলে মনোরম পলকসহ স্বজনরা সকাল থেকেই জেলগেটে অপেক্ষা করছিল। কাজল গেট থেকে বেরিয়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।
কাজলের মুক্তির বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পরই তাঁকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর নিখোঁজ হওয়াসহ গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু বলতে চাননি কাজল। বাসায় ফেরার পর কালের কণ্ঠকে তিনি শুধু বলেন, ‘আমি প্রথমে মহান আল্লাহর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার মুক্তির দাবিতে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গণমাধ্যমকর্মী এবং মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে যাঁরা সোচ্চার ছিলেন, তাঁদের প্রতিও আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং ঋণ স্বীকার করছি।’ এরপর তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কারো প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। সবই আমার কপালের লিখন বলে মেনে নিয়েছি।’
তাঁর সন্ধানে ও মুক্তির জন্য পরিবারের অক্লান্ত চেষ্টার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমার সন্তান মনোরম পলক আমার জন্য যা করেছে, তার জন্যও আমি গর্বিত। আমার প্রবাসী ছোট ভাই শাহীনের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।’
রাজধানী হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীর চর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গত ১৭ ডিসেম্বর ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে জামিন দেন হাইকোর্ট। ২৪ নভেম্বর শেরেবাংলানগর থানার মামলায়ও হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন এই সাংবাদিক। ফলে তাঁর জামিনে মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
গত ৯ মার্চ রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলানগর থানায় কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। মামলাটি করেছিলেন মাগুরা-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। এরপর ১০ ও ১১ মার্চ রাজধানী হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীর চর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরো দুটি মামলা হয়।
মামলা হওয়ার পর ১০ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরপুলের দৈনিক পক্ষকাল অফিস থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন কাজল। ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তাঁর স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তাঁর ছেলে মনোরম পলক।
ঢাকা থেকে নিখোঁজের ৫৩ দিন পর গত ২ মে রাতে যশোরের বেনাপোলের ভারতীয় সীমান্তের একটি মাঠ সাদিপুর থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে কাজলকে আটক করে বিজিবি। পরদিন ৩ মে অনুপ্রবেশের দায়ে বিজিবির করা মামলায় আদালতে সাংবাদিক কাজলের জামিন মঞ্জুর হলেও পরে কোতোয়ালি মডেল থানায় ৫৪ ধারায় অপর একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে কারাগারে ছিলেন কাজল।
এদিকে গণমাধ্যমের আরেক কর্মী, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ৬ মে থেকে কারাগারে আছেন। কিশোরের মুক্তি চেয়ে ১৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের তিন বিশেষজ্ঞ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এঁরা হলেন সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার কারিমা বেনুন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান ও সর্বোচ্চ মানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার লালেং মেফোকোং।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।