স্পোর্টস ডেস্ক : ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না গত মৌসুমেই ইউরোপিয়ান ট্রেবলজয়ী বায়ার্ন মিউনিখের জন্য। তবে হলো না শেষ পর্যন্ত। ঘরের মাঠে হেরেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে পা রাখল নেইমার-এমবাপ্পের পিএসজি।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) রাতে পার্ক ডি প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার-ফাইনালের ফিরতি লেগে ১-০ গোলে হেরেছে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। প্রথম পর্বে তারা ৩-২ গোলে জেতায় দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-৩। গত আসরের ফাইনালের দুই দলের লড়াইয়ে অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে শেষ চারে উঠেছে পিএসজি।
সেমিতে খেলতে অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে জিততে হতো শিরোপাধারী বায়ার্নকে। ম্যাচের শুরুর দিকের চিত্র অবশ্য তাদের চাওয়ার উল্টো কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। মুহুর্মুহু আক্রমণে সফরকারীদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে কিলিয়ান এমবাপ্পে-নেইমার জুটি। পিএসজির হয়ে এদিন যেন অন্যরূপ ধারণ করেছিলেন নেইমার জুনিয়র। দুর্দান্ত পায়ের যাদুতে একাই বায়ার্নের রক্ষণ নিয়ে খেলেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। তবে ভাগ্যদেবী এদিন যেন নারাজ ছিলেন নেইমারের উপর। গোলপোস্টে মানুয়েল নয়্যারও ছিলেন দুর্দান্ত।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের গতি কমে যায়, পিএসজিও পারেনি শুরুর ছন্দ ধরে রাখতে। বিরতির আগে এরিক-মাক্সিম চুপো মোটিংয়ের গোলে যে আত্মবিশ্বাস পায় বায়ার্ন, তাতে শেষ পর্যন্ত চাপ ধরে রাখে তারা। কিন্তু দ্বিতীয় সাফল্যের দেখা আর মেলেনি।
প্রথম লেগের নায়ক এমবাপ্পের নৈপুণ্যে ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে প্রথম সুযোগটি পায় পিএসজি। ডান দিক দিয়ে ফরাসি ফরোয়ার্ডের ডি-বক্সে ঢুকে নেওয়া শট দূরের পোস্টের পাশ দিয়ে বাইরে যায়। ম্যাচের ৯ম মিনিটের মাথায় এমবাপ্পের ক্রস থেকে দুর্দান্ত এক শট নেন নেইমার, তবে তা রুখে দেন ম্যানুয়েল নয়্যার।
এরপর দুর্দান্ত কিছু আক্রমণে পিএসজির রক্ষণের পরীক্ষা নেন টমাস মুলার, সানেরা। তবে পিএসজির রক্ষণ ভাঙতে পারেনি। উল্টো ম্যাচের ২৯তম মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পে স্ট্রাইকার পজিশনে থাকা নেইমারের উদ্দেশ্যে দুর্দান্ত এক পাস দেন। নয়্যারকে কাটিয়ে গোলের দিকেই এগোচ্ছিলেন নেইমার তবে এবার নিজেই যেন নিজের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। ফাঁকা গোলপোস্টেও বল জালে জড়াতে পারলেন না।
দুর্দান্ত সব আক্রমণের পশরা এদিন সাজিয়ে বসেছিল পিএসজি। তবে ওই যে ভাগ্যদেবী যেন তুষ্ট ছিলেন না নেইমারদের উপর। তাই তো ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে কিংসলে কোম্যানকে বোকা বানিয়ে ডান দিকের ওপরের কোনা বরাবর শট নেন নেইমার। বল বাঁক নিয়ে এগোচ্ছিল জালের দিকেই তবে শেষ পর্যন্ত গোলবারে লেগে বল বাইরে বেরিয়ে যায়। এর মাত্র মিনিট খানেক পর এমবাপ্পে বায়ার্নের রক্ষণকে পাশ কাটিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়ে বল বাড়ান নেইমারের দিকে। বল পেয়ে ডান দিকের কোনা বরাবর শট নেন নেইমার। কিন্তু না! বল এবারেও জাল ছুঁল না। গোলপোস্টে লাগে আর বিপদমুক্ত করে বায়ার্নের রক্ষণ।
পরপর দুই মিনিটে দুটি দুর্দান্ত সুযোগ নষ্ট করা নেইমারদের মাশুল দিতে হয় পরের মিনিটেই। ম্যাচের ৪০তম মিনিটে এরিক ম্যাক্সিম চুপো মোটিং দুর্দান্ত এক হেডে বল জালে জড়ালে ১-০’তে এগিয়ে যায় বায়ার্ন। অর্থাৎ দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ সমতায় ফেরে বাভারিয়ানরা। তবে সেমিতে যেতে হলে বায়ার্নকে জিততে হবে কমপক্ষে দুই গোলের ব্যবধানে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরো বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে খেলতে থাকে সফরকারীরা। তবে বায়ার্নের আক্রমণের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে পিএসজিও। ৫৩ মিনিটে বায়ার্নের ডি বক্সের বাঁ পাশ থেকে ডান প্রান্তে থাকা ডি মারিয়াকে দুর্দান্ত এক পাস দেন এমবাপ্পে। বল পেয়ে আলফোন্সো ডেভিসকে কাটিয়ে স্ট্রাইকার পজিশনে থাকা নেইমারকে লো ক্রসে বল বাড়ান ডি মারিয়া। বলটিতে কেবল পা ছোঁয়ালেই জড়াবে জালে কিন্তু নেইমার আবারও ব্যর্থ। গোল করার সহজ সুযোগটিও হাতছাড়া করলেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
এরপর বায়ার্ন চড়াও হতে শুরু করে পিএসজির ওপর। ৬২ মিনিটে লেরয় সানের ক্লিপ থেকে কাছের পোস্টে বল পান টমাস মুলার তবে বিপদ বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে মুলারকে প্রতিহত করেন পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাস।
বারবার গোলবার আর গোলপোস্টে বল লেগে গোলবঞ্চিত হলেও ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে ঠিকই বল জালে জড়ান। তবে এবার গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। ম্যাচের শেষ দিকে এসে প্রাণপণ চেষ্টা করেও আর গোল করতে পারেননি টমাস মুলাররা। আর তাতেই পিএসজির মাঠে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ১-০ গোলের ব্যবধানে জয়ের পরেও বিদায় নিতে হলো বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ গোলে সমতায় শেষ হলেও তিনটি অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে সেমিফাইনালের টিকিট কাটল পিএসজি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।