অমিতাভ ভট্টশালী, বিবিসি বাংলা : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যে ছাত্র-তরুণরা প্রতিবাদ- বিক্ষোভ করছেন, তারা আসলে আইনটা না বুঝেই তা করছেন। রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য কোনও মহল থেকে তাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন মি. মোদী।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান কার্যালয় – পশ্চিমবঙ্গের বেলুড় মঠে এক ভাষণে যখন তিনি একথা বলছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর দু’দিনের কলকাতা সফরের বিরোধিতা করে সারা দিনরাত কলকাতার রাজপথে অবস্থান করছিলেন শয়ে শয়ে ছাত্র-যুব এবং নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রতিবাদকারীরা।
কলকাতারা প্রাণকেন্দ্রে যখন শয়ে শয়ে ছাত্রছাত্রী – যুবক এবং বহু সাধারণ মানুষ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভে রাত জাগছে, তার মধ্যেই মি. মোদী এক ভাষণে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পক্ষে নিজের মত আবারও জানানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন জাতীয় যুব দিবসের ভাষণ মঞ্চ।
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে কলকাতার কাছেই বেলুড় মঠে ওই ভাষণে তিনি বলেন, “দেশে, বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে এখন একটা চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ। এই আইনটা কী, কেন এই আইন আনা জরুরি ছিল – সে ব্যাপারে যুবসমাজের মনে অনেক প্রশ্ন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যুবসমাজের বহু মানুষ এটা বুঝেছেন।”
“কিন্তু এরকমও অনেকে আছেন, যারা ভুল বুঝছেন, গুজবের শিকার হয়েছেন। তাদের বোঝানোটাও আমাদের সবার দায়িত্ব। সেজন্যই দেশের – বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপূর্বের যুবসমাজকে কিছু জরুরি বিষয় বলা উচিত তার নিজের,” বলছিলেন মি. মোদী।
এরপরেই তিনি একে একে ব্যাখ্যা করেন যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে তৈরি হওয়া পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে ৭০ বছর ধরে কীভাবে অত্যাচার হয়েছে।
সে দেশের সংখ্যালঘু মা বোনেদের কীভাবে ইজ্জতহানি হয়েছে এবং শুধু যে সেইসব কথিত অত্যাচারের শিকার হওয়া মানুষদেরই ভারতের নাগরিক হওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে, কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য এই আইন নয়, সেটাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ভাষণ শুনতে হাজির হওয়া মানুষদের প্রশ্ন করেন, “দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তানে যেসব মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন, তাদের কী মরার জন্য সেদেশে ফেরত পাঠানো উচিত?”
কয়েক হাজার ছাত্র-যুবক সমস্বরে তার বক্তব্য সমর্থন করেন।
তারপরেই নরেন্দ্র মোদী বলেন, “যেটা আপনারা বুঝতে পারছেন, কমবয়সী ছাত্ররাও বুঝে গেল। কিন্তু সেটাই রাজনীতির খেলোয়াড়রা বুঝেও বুঝতে চাইছে না। এত কিছু স্পষ্ট করে বারবার বলা সত্ত্বেও রাজনৈতিক কারণে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে লাগাতার ভুল ছড়াচ্ছেন।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই মি মোদী কী কী বলেছেন বেলুড় মঠে, তা জানতে পেরে যান এসপ্ল্যানেড অঞ্চলে রাতভর বিক্ষোভরত ছাত্র-যুবরা।
তারা তখনও মোদীবিরোধী এবং নাগরিকত্ব আইন বিরোধী স্লোগান দিয়ে অবরোধ করে রেখেছিলেন এসপ্ল্যানেড অঞ্চল।
শনিবার দুপুর থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ অবস্থান করেছেন তারা শীতের রাতে। কিন্তু তাদের কথায় আর স্লোগান দেওয়ায় ক্লান্তি ছিল না।
এক ছাত্রী বলছিলেন, “শীতের রাতে রাজপথে বসে থাকাটা কষ্টকর তো বটেই, কিন্তু নাগরিকত্ব আইন সম্পূর্ণভাবে চালু হয়ে গেলে বা এন আর সি শুরু হলে যে কষ্টে পড়ব, তার থেকে রাস্তায় রাত জাগাটা কম কষ্টের।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।