জুমবাংলা ডেস্ক: স্টেথোস্কোপ দিয়ে মোসতারা বেগমকে দেখছেন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রভাইডর (সিএইচসিপি) রত্না রানী পাল। আরো দুজন রোগী দেখার পর ওষুধ ও করণীয় বলে বিদায় দিলেন। একজন নারী রোগী অপেক্ষা করছেন। এ সময় আরেকজন নারী দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ক্লিনিকের দিকে আসছেন। প্রতিদিন এভাবেই চিকিৎসা চলে সুনামগঞ্জ সদরের মদনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে।
ক্লিনিকটি লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে হলেও পাশের কাঠইর ও জয়কলস ইউনিয়নের বাসিন্দারাও এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। ক্লিনিকটি সুবিধাজনক স্থানে হলেও চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। মাত্র ১০০ গজ রাস্তার অভাবে বর্ষায় রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সরজমিনে কমিউনিটি ক্লিনিকটিতে গিয়ে এই চিত্র দেখতে পান দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিনিধি শামস শামীম। কালের কন্ঠের আজকের সংখ্যায় প্রকাশিত শামস শামীমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটের সুনামগঞ্জ সড়ক ঘেঁষা দেখার হাওরের পশ্চিমে এবং দিরাই মদনপুর সড়কের দক্ষিণে মদনপুর গ্রামে ২০১৬ সালে সিকান্দর আলীর দান করা আট শতক জমিতে কমিউনিটি ক্লিনিকটি চালু হয়।
হাওরের জমিতে প্রতিষ্ঠার কারণে সদর রাস্তার পাশে হলেও ক্লিনিকটিতে যাতায়াতের রাস্তা নেই। এ কারণে সেবাগ্রহীতারা চরম দুর্ভোগে পড়ে। বর্ষায় নৌকায় এবং হেমন্তে হাওরের জাঙ্গাল ধরে ক্লিনিকে আসতে হয় রোগীদের। নেই বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদও ক্লিনিকটির উন্নয়নে তেমন সহযোগিতা করেনি। ফলে সেবাদানকারী ও সেবাগ্রহণকারীদের বিড়ম্বনা লেগেই আছে। তবে সম্প্রতি এ এলাকায় ৫০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অনুমোদন লাভ করায় আশপাশের সব জমি উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়ে গেছে। তাই ভবিষ্যতে ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তা থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সে ক্ষেত্রে এখনই উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা না হলে একসময় ক্লিনিকটি পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরখানেক আগে কোন্দলের জের ধরে জমির মালিক রাস্তা বন্ধ করে দিলে প্রায় এক বছর হাসপাতালটি বন্ধ ছিল। পরে এ বিষয়ে আবেদন করলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ গিয়ে রাস্তাটি খুলে দেন। এ সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টদের জনস্বার্থে একটি নলকূপ ও সৌরবিদ্যুৎ প্রদানের নির্দেশ দেন। সম্প্রতি মাত্র ২০ ওয়াটের একটি পৌর প্যানেল দেওয়া হলেও এখনো নলকূপের ব্যবস্থা করা হয়নি। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংযোগ সড়ক নির্মাণ, নলকূপ স্থাপন, বিদ্যুৎ সরবরাহ, সিঁড়ি ও রেলিং সংস্কার এবং ফ্লোর মেরামতের জন্য লিখিত আবেদন করা হয়। কিন্তু আজও এ দাবিগুলো পূরণ হয়নি।
কমিউনিটি ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, এই ক্লিনিকে জুনে ৫৫০ জুলাইয়ে ৩১৫ এবং আগস্টে ৪৩২ জন নারী, শিশু, সাধারণ রোগীসহ বিভিন্ন বয়সের রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩০ ধরনের ওষুধপত্র সরবরাহ করা হয়। সিএইচসিপিসহ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবার কল্যাণ সহকারী ও স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারীও মাঝেমধ্যে এখানে সেবা দিয়ে থাকেন।
কাঠইর গ্রামের রেনু বেগম বলেন, ‘বাড়ির কান্দাত আসপাতাল। কুন্তা অইলেই আওরপাতারো দৌড় দেই। আসপাতালও আওয়ার পথ নাই। কান্দা-গাতগাড়া পাইরা আইতে অয়।’ তবে সব সময় ওষুধ পাওয়া যায় না বলে জানান তিনি।
মদনপুর গ্রামের রাহেনা বেগম বলেন, ‘আমরার কোনো অসুখ-বিসুখ অইলে আসপাতালও আই। ইকানো আসপাতালটা অইয়া আমরার ভালা অইছে। সর্দি, কাশি, জ্বর, পেট ব্যথা ইতা রোগ অইলেই ইকানো অসুধ মিলে। চিকিৎসা পাইয়া বালা অই।’
লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ও ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সভাপতি এনামুল হক বলেন, অনেক মানুষ ক্লিনিকটিতে আসে। কিন্তু ক্লিনিকে আসার রাস্তাই নেই। ভবিষ্যতে রাস্তা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ আশপাশের জমি উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়ে গেছে। তাই এখনই উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।