জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকার কারওয়ানবাজারের হাতিরঝিল এলাকায় দুটি বেজমেন্টসহ পনের তলা ভবনটি ভাঙ্গার কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে আজ। খবর বিবিসি বাংলার।
১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সরকারের কাছ থেকে জমি পেয়ে পরবর্তীতে নিজেদের সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ করেছিলো তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
কিন্তু জলাধার আইন লঙ্ঘন করে ভবনটি তোলায় ২০১১ সালে হাইকোর্ট ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার রায় দিয়েছিলো পরে যা আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
পরে নানা আনুষ্ঠানিকতায় কিছুটা বিলম্বের পর রাজউক আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ভবনটি ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয়।
তখন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয়েছিলো যে ডিনামাইট ব্যবহার করে উন্নত বিশ্বের আদলে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি অপসারণের কাজ করা হবে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন মাসের মধ্য ভবন ভাঙ্গার শর্ত দিয়ে দরপত্র আহবান করে সেখান থেকে ভবনটি ভাঙ্গার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করেছে রাজউক।
প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের বদলে যান্ত্রিক পদ্ধতি, যেটি আসলে সনাতন পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত, ব্যবহার করে ভবনটি অপসারণ করবে বলে জানিয়েছেন পূর্ত মন্ত্র শ ম রেজাউল করিম।
ভবন ভাঙ্গার কার্যক্রমের সূচনা করে তিনি বলেছেন, “আমরা প্রথম দিকে ভেবেছিলাম অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় কোনো পদ্ধতিতে আমরা ভবনটি ভাঙ্গতে পারি কিনা। কিন্তু বিভিন্ন রকম বিবেচনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেলো এ ভবনের পাশে একটি বড় ফাইভ স্টার হোটেল ও অন্য প্রতিষ্ঠান আছে”।
তিনি বলেন ওই জাতীয় স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম চালাতে গেলে তার যে গতিবেগ ও শক্তি তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ভাঙ্গার সঙ্গে ধুলাসহ বিভিন্ন রকম (জিনিস) ছড়িয়ে পরিবেশও নষ্টও হতে পারে।
“এসব কারণেই আমরা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির বদলে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিয়েছি”।
তবে মন্ত্রীর ব্যাখ্যার সাথে একমত নন নগর পরিকল্পনাবিদ ড: আদিল মোহাম্মদ খান।
মিস্টার খান বলছেন সম্প্রতি ভারতে বিজিএমইএ ভবনের চেয়ে উঁচু একটি বহুতল ভবন ভাঙ্গা হয়েছে বিস্ফোরণের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এবং সেখানে কোনো প্রাণহানি বা পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হয়নি।
“বিশ্বব্যাপী এখন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেই ভবন ভাঙ্গা হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। এতে সময় ক্ষেপণ হয়না, প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকেনা এবং পরিবেশের কম ক্ষতি হয়”।
আদিল মোহাম্মদ খান বলেন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হলে জনদুর্ভোগ কমে, সময় বাঁচে ও শ্রমিকদের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকেনা।
“তবে এটি ঠিক যে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হলে সেটি একটু ব্যয়বহুল হতো। তবে তাতে রাজউক বা সরকারের উদ্বিগ্ন হবার কারণ ছিলোনা কারণ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবন ভাঙ্গার খরচ বিজিএমই’র কাছ থেকেই নেয়ার কথা”।
তার মতে সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙ্গার কারণ হিসেবে মন্ত্রী যে যুক্তি তুলে ধরেছেন তা বেশ দুর্বল বলেই মনে করেন তিনি।
“এ ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়, বরং অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে যেটি হয়তো প্রকাশ করা হয়নি”।
তবে রাজউকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে না করার ক্ষেত্রে পাঁচ তারকা হোটেলে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও-এর নিরাপত্তার পাশাপাশি আর্থিক দিকটিই বিবেচনা করা হয়েছে।
“স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করতে গেলে অনেক খরচ হতো। এমনকি বিদেশীদের সহায়তাও নিতে হতো। অতো খরচ বিজিএমই কর্তৃপক্ষ দিতে রাজী হতোনা। তাই সনাতন পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে যাতে ভবনটি যারা ভাঙ্গবে তারা ভবনের জিনিসপত্র বিক্রি করে তাদের খরচ তুলে নেবে”।
তবে মন্ত্রী যেহেতু বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন তাই এই কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
মন্ত্রী অবশ্য তার বক্তব্যে আরও জানিয়েছেন যে পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অবহিত রয়েছেন এবং তার নির্দেশনার আলোকেই অপসারণের কার্যক্রম শুরু হলো।
তিনি জানিয়েছেন যে এতো গভীর থেকে ভবনটি তুলে ফেলা হবে যাতে হাতিরঝিলের মূল গভীরতার সমান এবং এ ভবন যেখানে আছে সেখানেও সেই গভীরতায় যাওয়া সম্ভব হয়।
এছাড়া সেনাবাহিনী, রাজউক, বুয়েট, ইমারত বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে যারা এ ভবন ভাঙ্গার কাজ দেখভাল করবেন এবং প্রতিটি স্তর ভাঙ্গার সাথে সাথে সেগুলো অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হবে এবং সতর্ক থাকা হবে র্যাংগস ভবনের মতো কোনো প্রাণহানি যেনো না ঘটে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।