নিউ ইয়র্ক থেকে বয়োবৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখতে সপরিবারে দেশে এসেছিলেন মিজানুর রহমান। কাতার এয়ারওয়েজের রিটার্ন টিকিটও কাটা ছিল তাঁর। কিন্তু করোনা মহামারিতে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুরে তিনি আটকা। এখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হওয়ায় দ্রুত নিউ ইয়র্ক ফিরতে চান তিনি। কিন্তু টিকিট মিলছে না। মিজানুর রহমানের মতো অনেকেই এখন ভিড় করছেন এয়ারলাইনসের অফিসে। উচ্চমূল্য দিয়েও মিলছে না টিকিট।
আড়াই মাসের বেশি বন্ধ থাকার পর গত ১৬ জুন থেকে সীমিত আকারে দোহা রুটে কাতার এয়ারওয়েজ এবং লন্ডন রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে উড্ডয়নের অনুমতি দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এর মধ্যে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে কাতার এয়ারওয়েজ এবং আগামীকাল রবিবার থেকে লন্ডন রুটে ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২৫ শতাংশ আসন খালি রেখে এয়ারক্রাফটের ভেতরেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের নির্দেশনা আছে। তবে চাহিদা ও সরবরাহের ব্যাপক ফারাক হওয়ায় যাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত সময়ে টিকিট পাচ্ছেন না। সংকট কাটাতে ২১ জুন থেকে ঢাকা-দুবাই রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে এমিরেটস এয়ারলাইনসকে। কিন্তু তাতেও সংকট কাটবে না বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ২৫ শতাংশ আসন কমে যাওয়ায় এবং ফ্লাইট কম হওয়ায় শিগগির এই সমস্যা কাটবে না।
ভুক্তভোগী ইতালিপ্রবাসী সঞ্জীব মিলন বলেন, ‘পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাতার এয়ারওয়েজের অফিসে গিয়ে টিকিট পাইনি। তাদের সব কটি ফোন নম্বরে কল করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। ১৭ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত নাকি সব ফ্লাইটের বুকিং শেষ। তাহলে যাব কিভাবে?’
জানতে চাইলে কাতার এয়ারওয়েজ ঢাকা কার্যালয়ের মার্কেটিং কো-অর্ডিনেটর সামিনা রেজা বলেন, ‘আমরা আগে যেখানে দিনে চারটি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ পেতাম, এখন সেখানে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে অনেক যাত্রীর চাপ আসায় সংকট তৈরি হয়েছে। টিকিটের প্রচুর চাহিদা থাকায় বাংলাদেশ অফিসে (তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায়) যাত্রীরা ভিড় করলে শারীরিক দূরত্ব মেনে টিকিট বিক্রি সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাময়িকভাবে অফিস বন্ধ করা হয়েছে। বুকিংসংক্রান্ত তথ্যের জন্য যাত্রীদের ফোনে বা ই-মেইলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’
ফ্লাইটসংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কাতার এয়ারওয়েজকে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালুর অনুমতি দিয়েছি। এ ছাড়া এমিরেটসকে ২১ জুন থেকে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বেশি আমরা অনুমতি দিতে পারছি না। আপাতত ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে আমরা অন্য এয়ারলাইনসকেও অনুমতি দেব।’
তিনি বলেন, ‘যেসব প্রবাসী দেশে ফিরবে, তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সক্ষমতার বেশি ফ্লাইটের অনুমতি দেওয়া হবে না। আমাদের দেশটিকেও নিরাপদ রাখতে হবে। করোনাঝুঁকি প্রশমনের জন্য কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার প্রকোপ কমলে ফ্লাইট বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবে।’
বেবিচক সূত্র জানায়, এয়ার অ্যারাবিয়া, ফ্লাই দুবাই ও তুরস্কের টার্কিশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশে ফ্লাইট চালুর জন্য বেবিচকের কাছে অনুমতি চেয়েছে। এর মধ্যে টার্কিশ এয়ারলাইনস ১ জুলাই থেকে এবং বাকিরা অনুমতি পেলেই ফ্লাইট চালু করতে চায়। শর্ত পূরণ করতে পারলে তাদেরও শিগগিরই ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেওয়া হবে বলে বেবিচক সূত্র জানায়। এদিকে লন্ডন রুটে ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘আগামী রবিবার থেকে লন্ডন রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু হবে। এই পথে আমাদের সপ্তাহে এক দিন ফ্লাইট চলবে।’
করোনাভাইরাসের কারণে গত ২১ মার্চ চীন ছাড়া সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পথে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় বেবিচক। ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের ৩৫টি নির্দেশনা জারি করে বেবিচক।
এদিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের দেশে প্রবেশের ৭১ ঘণ্টা আগে করোনা আক্রান্ত নয়—এমন সনদ নিয়ে আসতে হবে। বেবিচক এক আদেশে বলেছে, যারা দেশে ফিরবে তাদের করোনা পরীক্ষার ফল এবং সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। যাত্রী যে দেশের নাগরিকই হোক না কেন, ‘করোনা নেগেটিভ’-সংবলিত মেডিক্যাল সার্টিফিকেটটি ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করা থাকতে হবে। তবে কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি যদি এই সনদ ছাড়া দেশে ফেরে, তাহলে বিমানবন্দর থেকে তাদের সরাসরি ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে।
ঢাকা থেকে ইউএইর নাগরিক এবং অন্যান্য দেশের ট্রানজিট যাত্রী পরিবহন করবে এমিরেটস। দুবাই ট্রানজিট হয়ে বাংলাদেশি যাত্রীরা কলম্বো, ইস্তাম্বুল, অকল্যান্ড, বৈরুত, ব্রাসেলস, হ্যানয়, হো চি মিন সিটি, বার্সেলোনা, ওয়াশিংটন ডিসি, লন্ডন হিথ্রো, ম্যানচেস্টার, ফ্রাংকফুর্ট, প্যারিস, মাদ্রিদ, আমস্টারডাম, কোপেনহেগেন, ডাবলিন, নিউ ইয়র্ক জেএফকে, টরন্টো, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে যেতে পারবে। সূত্রঃ কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।