গ্রহরাজকে হারিয়ে দিলো বলয়গ্রহ
জুমবাংলা ডেস্ক : যতটা মাতামাতি মঙ্গল নিয়ে, বৃহস্পতি আর শনি নিয়ে অতটা উচ্ছ্বাস কিন্তু মানুষ দেখায়নি। চোখের আড়াল হলে বুঝি মনের আড়াল হয়ে পড়ে। গ্রহ দুটো অতদূরে আছে বলেই বোধকরি বিমুখ বিজ্ঞানীরাও। তবু, ভাগ্যিস বিশেষ দুটো বৈশিষ্ট্যের সুবাদে ওদের নাম রটে আছে জনে জনে। বৃহস্পতি হলো সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ, আমরা তাই ডাকি গ্রহরাজ। আর নয়নাভিরাম (অবশ্য চোখ ভেড়াতে হবে টেলিস্কোপের লেন্সে) ও বিস্ময় জাগানিয়া হাজারখানেক বলয়ের জন্য শনিকে আমরা বলি বলয়গ্রহ। তা সত্ত্বেও নৈকট্য ও উপযোগিতা বিবেচনা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো এদের ওপর খুব একটা নজর দেয়নি (বা নজরদারি করেনি)।
কিন্তু আরেকটা কারণে গ্রহজোড়া মাঝেসাঝে খবরের শিরোনাম হয়। ঠিক এই লেখাটি সেই কারণে লিখছি আর সে কারণটি হলো, এদের প্রাকৃতিক উপগ্রহ তথা চাঁদের সংখ্যা। এই কারণেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে ওরা কিন্তু গাইতে পারছে না, ‘যায় দিন এমনি যদি যায় যাক না/হিসাবের খাতার পাতা অঙ্কবিহীন থাক পড়ে থাক না।’ গবেষকরা অধুনা অঙ্ক কষে যা দেখতে পেয়েছেন, এতে বৃহস্পতির একটি খেতাব এখন মুছে দিতে যাচ্ছে শনি। কিছুদিন আগেও বৃহস্পতির জানা চাঁদের সংখ্যা ছিল ৯৫, আর শনির ৭৩। কিন্তু নতুন করে শনিকে ঘিরে আরও ৬২টি চাঁদকে ঘুরতে দেখা গেছে। ফলে যদি নিশ্চিত হয়, তা হলে শনির মোট প্রাকৃতিক উপগ্রহের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪৫। মানে, বৃহস্পতির চেয়ে ৫০টি চাঁদ বেশি আছে বলয়গ্রহটির। মনে হয় না, বৃহস্পতি সহসা আর সবচেয়ে চাঁদবহুল গ্রহের খেতাব ফিরে পাবে।
সূর্য থেকে দূরত্ব অনুসারে গ্রহগুলোর নাম নিলে এই ক্রমটা দাঁড়াবে: বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। তুলনার জন্য বলা যায়, প্রথম দুটোর কোনো চাঁদ নেই। আমাদের জীবনদায়ী গ্রহ পৃথিবীর চাঁদ মাত্র একটি। লালগ্রহের আছে দুটি চাঁদ। ইউরেনাসের ২৭টি আর নেপচুনের আছে ১৪টি [এই লেখার পাঠকদের মধ্যে যারা প্লুটোকে গ্রহ বলে চিনে এসেছেন, কিংবা সেই ২০০৬ সালে গ্রহের পদবি হারানো সত্ত্বেও যারা একে গ্রহ বলেই মনে রেখেছেন, তাদের জন্য বলা : প্লুটোর আছে পাঁচটি চাঁদ]।
দেখা যাচ্ছে, গ্রহগুলোর ২৭৪টি চাঁদের মধ্যে মাত্র ৪৪টি ছাড়া বাকিগুলো হয় বৃহস্পতি, নয় শনির। এদের এত বেশি চাঁদ কেন, তা এমনকি বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেননি।
শনির যে চাঁদগুলো নতুন করে দেখতে পাওয়া গেছে, এগুলো আমাদের আকাশে রাতের বেলা যেমন উজ্জ্বল বস্তু দেখা যায়, তেমন আলোকদীপ্ত নয়। আলুর যেমন আকার, এই চাঁদগুলোর চেহারাও তেমনি অনিয়মিত। একে তো চওড়ায় এরা এক কি দুই মাইলের মতো হবে, অন্যদিকে শনিকে প্রদক্ষিণ করে বহুদূরের কক্ষপথ ধরে, ৬০ লাখ মাইল থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ মাইল দূর দিয়ে। তুলনার জন্য বলছি, শনির বৃহত্তম চাঁদ টাইটান ঘোরে ‘মাত্র’ ১০ লাখ মাইল দূর দিয়ে। ফলে ছোট্ট হওয়ায় ও অতিদূর দিয়ে ঘোরার কারণে নতুন চাঁদগুলো অতটা চোখে পড়েনি, অন্তত এতদিন। তবে এদের বিশেষত্ব হলো, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরা দলবদ্ধ হয়ে আছে। এবং সম্ভবত এরা বড় কয়েকটা চাঁদের ভগ্নাবশেষ। ওই বড় চাঁদগুলো সম্ভবত শনিকে ঘিরে ঘুরতে গিয়ে সুদূর অতীতে, মানে সৌরজগতের শৈশবকালে কোনো সংঘাতের মুখে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল।
এই একটি কারণে অন্তত এই চাঁদগুলোর বিশেষ তাৎপর্যও রয়েছে। সৌরজগতের অমীমাংসিত জিজ্ঞাসার জবাব খুঁজে বের করতে এরা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। এক্কেবারে শুরুতে সৌরজগতে কী কী ঘটেছিল, সেসবের অঙুলিছাপ হিসেবে প্রতীয়মান হয়ে উঠতে পারে এসব শনির চাঁদ। এ ছাড়া আকার ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কথা বিবেচনা করলে, ক্রমবর্ধমান নব নব সন্ধানকৃত উপগ্রহগুলো আমাদের একটি জটিল জিজ্ঞাসার মুখে ফেলে দেয় : আমরা ঠিক কাকে চাঁদ বলছি?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।