সরকারের তথ্য চুরি ও ছবি তোলার অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সোমবার মন্ত্রণালয়ে ৫ ঘণ্টা আটক রেখে রাতে পুলিশে দেয়া হয়। পরে এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মন্ত্রণালয়ে আটক রাখা অবস্থায় তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও এই নির্যাতনে অংশ নেন। তেমনি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
তবে রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো এক নারীর ছবি নিজের নয় বলে দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জেবুন্নেসা বেগম। মঙ্গলবার হেলথ মিডিয়া সেল বিডি ফেসবুক পেজ থেকে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
সচিবালয়ে সোমবার পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ রাখার পর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। মামলায় রোজিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নথি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ঘটনা নিয়ে সংবাদকর্মীদের তীব্র ক্ষোভের মধ্যেই সোমবার রাতে ফেসবুকে কয়েকটি ছবিসহ একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। এতে অভিযোগ করা হয়, রোজিনাকে আটকে রাখার সময় নির্যাতন করেছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জেবুন্নেসা বেগম।
ওই পোস্টে জেবুন্নেসার নাম, পরিচয় ও মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সম্পদের একটি বিবরণও দেয়া হয়েছে। পোস্টে দাবি করা হয়, জেবুন্নেসার কানাডাতে তিনটি বাড়ি, ইস্ট লন্ডনে একটি বাড়ি রয়েছে। দেশে ঢাকায় চারটি বাড়ি, গাজীপুর জেলায় ২১ বিঘা জমিসহ ব্যাংকে ৮০ কোটি টাকার এফডিআর আছে। তবে কারও পোস্টেই তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
জেবুন্নেসা বেগম মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনকারী হিসেবে যে নারীর ছবি ছড়ানো হয়েছে সেই নারী তিনি নন।
তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধুবান্ধব আছেন, আত্মীয়স্বজন আছেন, সিনিয়র-জুনিয়র আছেন। আমার সাথে যারা কর্মরত আছেন বা আমার সাথে কাজ করেছেন অথবা যারা আমার সাথে ফেসবুকে আছেন, আপনারা খুব সহজেই অনুমান করতে পারবেন আসলে ওই ছবিটিতে দেখানো হচ্ছে যে, সাংবাদিক রোজিনার সাথে যার ক্লোজ দাঁড়ানোর ছবি, সেটি আমার নয়।’
জেবুন্নেসা বলেন, ‘আমি একজন মোটামুটি বয়স্ক মহিলা। আপনারা জানেন আমার বয়স ৫৭ বছর অতিক্রম করছে। আমি কখনোই ওই গেটাপের মানুষ নই। গতকাল যখন ঘটনাটি ঘটে তখন আমি ১০ মিনিট আগে আরেকটি প্রেস কনফারেন্সে ছিলাম।
‘যে প্রেস কনফারেন্সটি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য এবং বিভিন্ন বিষয় আলাপ করার জন্য কল করেছিলেন। সেখানে অনেক সাংবাদিক ভাইয়েরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আপনারা দেখতে পাবেন, গতকাল আমি কিন্তু ওই ধরনের পোশাক পরিধান করিনি। আমি শাড়ি পরা অবস্থায় ছিলাম। সেটার ছবি আমার কাছে আছে। প্রতিটি মিডিয়াতে আছে।’
‘আপনারা দয়া করে মিলিয়ে দেখবেন সেই ছবিটি আমার নয়। দয়া করে আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা আমার এই ছবিটি প্রচার করে নাম ব্যবহার করছেন; সামাজিক, ব্যক্তিগত, পারিবারিক বিভিন্নভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করছেন, মানহানি করছেন, আমার সন্তানদের কাছে বিব্রত করছেন। এই কাজটি থেকে বিরত থাকবেন দয়া করে।’
তিনি বলেন, ‘যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তবে ছবিটি প্রমাণ করে না যে এখানে কী করা হচ্ছে। এটি কি তাকে তোলা হচ্ছে বা অন্য কিছু করা হচ্ছে। যদি আমাদের তদন্তে এমন কিছু বেরিয়ে আসে, যদি কোনো ধরনের অসহযোগ আচরণ অথবা অন্য অসদাচরণ হয় সেটা তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। তার বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। তাকে খুঁজে বের করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।