বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কথা বললে প্রথমেই আসবে গুগল, মাইক্রোসফটের নাম। এ দুই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে আছেন দুই ভারতীয়। সর্বশেষ মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারের শীর্ষ পদে সম্প্রতি অধিষ্ঠিত হয়েছেন একজন ভারতীয়। শুধু কী তাই; অ্যাডোব, আইবিএম, মাইক্রন কিংবা ভিমিওর মতো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে রয়েছেন ভারতীয়রা। শীর্ষ পদ ছাড়াও বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে শত শত ভারতীয় কর্মী কাজ করছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও আলো ছড়াচ্ছেন। সুন্দর পিচাই, সত্য নাদেলা, শান্তনু নারায়ণদের পাশে উচ্চারিত হচ্ছে জয়শ্রী উল্লাল, রেবতী অদ্বৈতি কিংবা অঞ্জলি সুদের নাম। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন পরাগ আগারওয়াল। নেতৃত্ব, কাজের দক্ষতা এবং সময়োপযোগী দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভারতীয় সিইওদের কদর বাড়ছে প্রযুক্তি বিশ্বে।
টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি দায়িত্ব ছেড়েছেন কোম্পানিটির প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা পরাগ আগারওয়ালের কাছে। পরাগ সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত ৪৫ বছর বয়সী জ্যাক ডরসি লিখেছেন, ১৬ বছর ধরে টুইটারের শীর্ষে পদে দায়িত্ব পালন করেছি। অবশেষে মনে হচ্ছে, আমার সরে যাওয়ার সময় এসেছে। তিনি আনন্দের সঙ্গেই দায়িত্ব ছাড়ছেন, কারণ তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন পরাগ আগরওয়াল; যার ওপর নির্দি্বধায় ভরসা রাখতে পারেন। পরাগের মধ্যেই নিজের ছায়া দেখছেন জ্যাক।
২০১১ সালে টুইটারে চাকরি নেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রিধারী পরাগ। ২০১৭ সালে প্রধান কারিগরি কর্মকর্তার দায়িত্ব পান। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি, বোম্বে) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন পরাগ। ২০০৬-পরবর্তী সময়ে মাইক্রোসফট, এটিঅ্যান্ডটি ও ইয়াহুর মতো কোম্পানিতে কাজ করেন। পরাগ যখন টুইটারে যোগ দেন, তখন প্ল্যাটফর্মটির কর্মীর সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও কম। জ্যাক ডরসির এ স্তুতির পরই প্রযুক্তি বিশ্বে পরাগের নাম আলোচিত হচ্ছে সুন্দর পিচাই, সত্য নাদেলা, অরবিন্দ কৃষ্ণদের সঙ্গে। হবেই না বা কেন, তারা প্রত্যেকেই যে ভারতীয় এবং বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তা!
প্রযুক্তি কোম্পানির নাম নিলে প্রথমেই আসবে গুগলের কথা। গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই একজন ভারতীয়। খড়্গপুর আইআইটি থেকে স্নাতক পাস করেন তিনি। ল্যারি পেজ ও সার্জিও ব্রিনের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বসেরা প্রযুক্তি কোম্পানি গুগলে তিনি ২০০৪ সালে যোগ দেন। ২০১৫ সালে গুগলের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পান। এর আগে এ দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন ল্যারি পেজ। গুগল পরে অ্যালফাবেটের আওতায় এলে ২০১৯ সালে অ্যালফাবেটেরও প্রধান নির্বাহী হন ৪৯ বছর বয়সী সুন্দর পিচাই। আর এক প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট। বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটির এখন শীর্ষ কর্তা সত্য নাদেলা নামের এক ভারতীয়।
হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণকারী সত্য নাদেলা (৫৪) ২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী হিসেবে স্টিভ বালমারের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর সবকিছু দারুণভাবে সামলাচ্ছেন তিনি। মনিপাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করেছিলেন। তিনি ২০১১ সালে মাইক্রোসফটে যোগ দেন। সিইওর পাশাপাশি মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।
প্রযুক্তি বিশ্বে অরবিন্দ কৃষ্ণও আলোচিত নাম। এই ভারতীয় এখন সামলাচ্ছেন আইবিএমের প্রধান নির্বাহীর পদ। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরি জেলার এক তেলেগু পরিবারে জন্ম অরবিন্দের। তিনি আইআইটির স্নাতক। ১৯৯০ সালে আইবিএমে যোগ দেন অরবিন্দ। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি আইবিএমের প্রধান নির্বাহী নিযুক্ত হন। এ বছর চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পেয়েছেন ৫৮ বছর বয়সী ঝানু এই সিইও।
প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে নাড়াচাড়া করেন অথবা স্যানডিস্কের নাম জানে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এই স্যানডিস্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা কানপুরের সঞ্জয় মেহরোত্র। ১৯৮৮ সালে স্যানডিস্ক প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্যানডিস্কের প্রধান নির্বাহী ছিলেন। ২০১৬ সালে স্যানডিস্ককে ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল অধিগ্রহণ করে। ২০১৭ সালে সঞ্জয় মাইক্রন টেকনোলজির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন। ৬৩ বছর বয়সী সঞ্জয় মার্ক দুরকানের স্থলাভিষিক্ত হন।
সফটওয়্যার কোম্পানি হিসেবে অ্যাডোবের বিশ্বজুড়ে রয়েছে জনপ্রিয়তা। অ্যাডোবের প্রধান নির্বাহীও ভারতীয়। শান্তনু নারায়ণ নামের এ ভারতীয় হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ৫৮ বছর বয়সী শান্তনুর নেতৃত্বে ২০১৮ সালে ১০ হাজার কোটি ডলারের কোম্পানি হয়ে ওঠে অ্যাডোব। শান্তনু ও অ্যাডোবের সফলযাত্রা এখনও চলমান।
গুগলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা নিকেশ অরোরা এখন পালো অল্টো নেটওয়ার্কসের প্রধান নির্বাহী। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটির ছাত্র নিকেশের জন্ম ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে। ২০১৮ সালে পালো অল্টো নেটওয়ার্কসে প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন ৫৩ বছর বয়সী নিকেশ অরোরা।
প্রযুক্তিবিশ্বে ভারতীয় নারীদের দাপটও দৃশ্যমান। ২০০৮ সালে ক্লাউড নেটওয়ার্কিং কোম্পানি আরিস্টার প্রধান নির্বাহী ও সভাপতি পদে নিয়োগ পেয়েছেন ভারতীয় নারী জয়শ্রী উল্লাল। জন্ম লন্ডনে হলেও বেড়ে উঠেছেন নয়াদিল্লিতে। ২০০৮ সালে আরিস্টার প্রধান নির্বাহী ও সভাপতি পদে নিয়োগ পান এই বিলিয়নেয়ার।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিকস নির্মাতা কোম্পানি ফ্লেক্সের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পান রেবতী অদ্বৈতি। তিনি বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির স্নাতক। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে প্রধান নির্বাহী হয়েছেন অঞ্জলি সুদ। বাবা-মা ভারতীয় হলেও অঞ্জলির জন্ম মিশিগানে। ২০১৭ সালে সিইও হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।