জুমবাংলা ডেস্ক: দেশের শীর্ষ স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের দেওয়া নতুন দোকান আর গাড়ি নিয়ে আগের চেয়েও এখন আরো সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কুন্দনহাটের পঙ্গু মেইল মোজাম্মেল। দোকান ও গাড়ির চাকা তার ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছে।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) উপজেলার কুন্দনহাট গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তার পাশে মোজাম্মেলের জন্য গত বছর একটি দোকান নির্মাণ করে দিয়েছিলো ওয়ালটন। দোকানটি রাস্তার পাশে হওয়ায় এখন তিনগুণ বেশি কাজ পাচ্ছেন তিনি। পূর্বের ভাড়া দোকানের চেয়ে এই দোকানে লোকজন বেশি আসছেন তাদের ভ্যান-রিকশা ও সাইলকেল মেরামত করাতে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এই দোকানের কর্মযজ্ঞ।
এছাড়াও মেইল মোজাম্মেল প্রতিদিন ওয়ালটনের দেওয়া উন্নতমানের বড় এবং মজবুত অটোগাড়িতে করে দোকানে যাওয়া আসা করছেন। ১৫ কিলোমিটার দূরের বিরামপুর শহরেও দোকানের জন্য মালামাল কিনতে এই গাড়িতে চড়েই যান তিনি।
সাহসের প্রতীক ‘মেইল’ মোজাম্মেল শিরোনামে গত বছরের ২২ জুন একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে। ওই প্রতিবেদনে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কুন্দনহাটের বাসিন্দা দুই পা হারানো মোজাম্মেল হকের জীবনসংগ্রাম তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি দেখার পর মোজাম্মেল হককে নতুন দোকান ও চলাচলের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয় ওয়ালটন। একই বছরের ২৫ অক্টোবর বিকেলে মোজাম্মেল হকের কাছে দোকান ও গাড়ি হস্তান্তর করা হয়।
মেইল মোজাম্মেল ভ্যান-রিকশা আর সাইকেলের মেকার। দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি। এক সময় তিনি একজন সুস্থ সবল এবং সুঠোম দেহের অধিকারী ছিলেন। এলাকার মানুষ তাকে মেইল বলে ডাকতেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১১ থেকে ১৩ বছর আগে ডাম পায়ে তার একটা ছোট ক্ষত হয়। আর সেই ক্ষতই যেন তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। পরে অপারেশন করে তার কোমর পর্যন্ত দুই পা কেটে ফেলতে হয়। শেষের অপারেশনে তিনি সম্পূর্ণভাবে শ্রবণ শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। সে সময় চিকিৎসা করাতে সব সম্পদ শেষ হয়ে যায় তার। কিন্তু মনোবল হারাননি তিনি। পঙ্গু অবস্থায় অন্যের দোকান ভাড়া নিয়ে জীবনযুদ্ধ শুরু করেন। বর্তমানে অন্যের ভাড়া দোকান বাদ দিয়ে ওয়ালটন গ্রুপের দেওয়া দোকানেই চলছে তার কাজ।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, মেইল মোজাম্মেল একজন অসহায় পঙ্গু মানুষ ছিলেন। মানুষের দোকান ভাড়া দিয়ে থাকতে তার অনেক অসুবিধা হতো। তবে আমরা ওয়ালটন কোম্পানিকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এমন এক পঙ্গু মানুষকে দোকান তৈরিসহ একটা গাড়ি দেওয়ার জন্য। আজ মেইল মোজাম্মেল অনেক ভালো আছেন। আগের চেয়েও এখন তার কাজের গতি অনেক বেড়েছে। রিকশা-সাইকেল ও ভ্যানের মতো গাড়ি ঠিক করান সবাই তার কাছ থেকে।
মেইল মোজাম্মেল অশ্রু ঝড়া কণ্ঠে বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। আমি ওয়ালটনের কাছে চির ঋণী। প্রতিদিন রাতে দোকান বন্ধ করার আগে আমি আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। এছাড়াও আমি যতদিন বাঁচবো, ততদিন ওয়ালটনের জন্য দোয়া করবো।’
বিবিসির প্রভাবশালীর তালিকায় স্থান পাওয়া ছোঁয়ার অন্যরকম এক গল্প
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।