ভালো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি

islamic (4)

ধর্ম ডেস্ক : কবরজীবনের সূচনা হয় মৃত্যুর মাধ্যমে। শুরু হয় ওপারের অনন্ত জীবন। মৃত্যু যেকোনো মুহূর্তেই আসতে পারে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘কেউ জানে না সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না তার মৃত্যু কোথায় ঘটবে।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৩৪)

islamic (4)

আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘মানুষসহ প্রতিটি প্রাণীর প্রতিটি মুহূর্তই যেন তার মৃত্যুর মুহূর্ত।’ এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মানুষ! মৃত্যু আসার আগেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৮৯৪৯)

কিছু মৃত্যু জগৎ আলোড়িত করে। প্রতিটি মানুষকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে যায়। আর কিছু মৃত্যু মানুষকে স্বস্তি দেয়। জুলুম-অত্যাচারের অবসান ঘটায়। কোনো এক কবি বলেছিলেন, ‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন/মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।’ ভালো মৃত্যুর জন্য চাই পরিকল্পিত জীবন।

আর এ জন্য প্রয়োজন আল্লাহর রহমত বা বিশেষ দয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোনো বান্দার মঙ্গল চাইলে তাকে যোগ্য করে তোলেন।’ সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কিসের যোগ্য?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘মৃত্যুর আগে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দিয়ে ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ জান্নাতের যোগ্য করে তোলেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪২)

মুমিনমাত্রই আল্লাহর প্রতি এই সুধারণা পোষণ করবে যে তিনি অবশ্যই মৃত্যুর সময় বান্দার কষ্ট কমিয়ে দেবেন। কারণ আল্লাহর প্রতি যে যেমন ধারণা করবে আল্লাহ তার সঙ্গে তেমন আচরণই করবেন।

এক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি আচরণ করি। আমি তার সঙ্গে থাকি।’
(বুখারি, হাদিস : ৭৪০৫)

অন্য হাদিসে জাবির (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুর তিন দিন আগে তাঁকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, তোমাদের সবাই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মারা যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭১২১)

মৃত্যুকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করার মাধ্যমেও ভালো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়। বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করার বড় একটি উপকার হচ্ছে, অন্তর থেকে দুনিয়ার আসক্তি দূর হয় এবং পরকালের চিন্তা ও আমল বাড়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সব ভোগ-উপভোগ বিনাশকারী মৃত্যুর কথা তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৭)

মৃত্যুর কথা স্মরণের আরেকটি উপায় হলো কবর জিয়ারত। কবর জিয়ারত মৃত্যু ও আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। অন্তরে কবরের শাস্তির ভয়াবহতা সৃষ্টি করে। ফলে এর মাধ্যমে অন্যায় থেকে তাওবা এবং মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণে সাহায্য করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)

কবর জিয়ারতের মাধ্যমে বান্দার মনে প্রথমেই কবরের চাপের কথা ভেসে ওঠে। আম্মাজান হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সবাইকেই কবর চাপ দেবে। কেউ যদি কবরের চাপ থেকে বাঁচতে পারত তাহলে আমার প্রিয় সাহাবি সাদ ইবনে মুয়াজ বাঁচতে পারত।’ (মুসনাদে আহমাদ ও বায়হাকি শরিফ)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘সাদকে কবরে রাখার পর রাসুল (সা.) কয়েকবার সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়লেন। হুজুরের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও তাসবিহ পড়লাম। রাসুল (সা.) বললেন, ‘এই নেককার সাদের কবর সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাসবিহ পড়ার পর আল্লাহ তার কবর প্রশস্ত করে দিয়েছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ ও তিবরানি শরিফ)

https://inews.zoombangla.com/%e0%a6%b9%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%97%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9b%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%8f%e0%a6%95/

কবরের চাপের ব্যাপারে সাহাবি ও তাবেঈরা সব সময় ভীত থাকতেন। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘আমরা রাসুলের যত হাদিস শুনেছি সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল কবরের চাপ দেওয়ার হাদিস, বিশেষ করে জলিলে কদর সাহাবি সাদও যখন কবরের চাপ থেকে বাঁচতে পারেননি, তখন আমাদের মতো মানুষের কী উপায় হবে—এ চিন্তায় আমরা সব সময় পেরেশান থাকতাম।’ (মুসান্নিফে আবদুর রাজ্জাক)

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ভালো মৃত্যুর প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক :মাওলানা শাহ মো. শফিকুর রহমান