ভিন্ন ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করেছে মেয়ে। সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে মেয়ের কুশপুতুল বানিয়ে সেই পুতুল শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করলেন বাবা। ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের ভুটকিরহাট এলাকায়। দাহ করার পর রীতিমতো পুরোহিত ডেকে মেয়ের শ্রাদ্ধ শান্তিও করেছেন বাবা।
জানা গিয়েছে, ওই এলাকার বাসিন্দা নারায়ণ দে তাঁর একমাত্র মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন অসমের এক যুবকের সঙ্গে। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন নিখোঁজ হয়ে যান তাঁর মেয়ে। দু’দিন পর নারায়ণ দে জানতে পারেন তাঁর মেয়ে ভিন্নধর্মী এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন। খবরটা পাওয়ার পর প্রথমে একেবারেই ভেঙে পড়েন নারায়ণ। কান্নাকাটি করতে থাকেন। নিখোঁজের বিষয়টি যেহেতু পুলিশকে জানিয়েছিলেন সেজন্য মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে স্থানীয় থানায় অনুরোধ জানান এবং থানায় মেয়ের সঙ্গে দেখাও করেন। অনুরোধ করেন ফিরে আসতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার আরও বড় ধাক্কা খান নারায়ণ। মেয়ে তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি আর ফিরে আসবেন না। যাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছেন তাঁর সঙ্গেই সংসার করবেন। এই আচরণে গুম মেরে যান নারায়ণ ও তাঁর স্ত্রী। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেন, মেয়ে তাঁদের কাছে ‘মৃত’।
বাড়ি ফিরতে ফিরতেই সিদ্ধান্ত নেন, মেয়ে যখন তাঁদের কাছে মৃত তখন তাঁর দাহ থেকে শুরু করে শ্রাদ্ধ, সমস্ত কিছু করেই তাঁর মায়া এই জীবনের মতো ত্যাগ করবেন। সেই মতো তৈরি হয় কুশপুতুল এবং মৃতদেহ বহনের জন্য বাঁশের মাচা। কুশপুতুলকে পড়ানো হয় নতুন শাড়ি। কাঁধে করে নারায়ণ এবং তাঁর পরিজনরা হরিদ্ধনি দিতে দিতে সেই পুতুল নিয়ে যান শ্মশানে। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া পড়শিদের উপস্থিতিতে শ্মশানে দাহ হয় সেই পুতুল। এরপর মেয়ের শ্রাদ্ধও করেন নারায়ণ।
ঘটনায় কেউ বা হতবাক, আবার কেউ সমালোচনা করেছেন। নারায়ণের কথায়, ‘আজ থেকে ওই মেয়ে আর আমার মেয়ে নয়। আমি তাঁকে সামাজিক ও আইনিভাবে ‘ত্যাজ্য’ ঘোষণা করব। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমি সমাজে বার্তা দিতে চাই, যেন তাঁদের সন্তানরা এই ভুল না করে।’ নারায়ণকে সমর্থন করে কেউ জানিয়েছেন, একজন বাবা-মা কতটা অসহায় হলে এইরকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যদিকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কেউ কেউ বলেছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা কাকে বিয়ে করবেন বা করবেন না সেটা সম্পূর্ণ তাঁর নিজের অধিকার। জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার থেকে যে তিনি নিজের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করেছেন সেটা নিয়ে কারুর কিছু বলার থাকতে পারে না।
যদিও জলপাইগুড়ির ঘটনা নতুন কিছু নয়। পরিবারের অপছন্দে বিয়ে বা ভিন্ন জাতের পাত্র বা পাত্রী পছন্দকে কেন্দ্র করে রাজ্য-সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কোথাও নিজের মেয়ে বা ছেলেকে খুন আবার কোথাও অপছন্দের পাত্র বা পাত্রীকেও খুনের উদাহরণ আছে। কিছুদিন আগে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। পরিবারে অমতে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে বিয়ে করেছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের এক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে জীবিত মেয়ের শ্রাদ্ধ করেছিল পরিবার। সেই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের খাটুরা উত্তরপাড়ার বাসিন্দারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।