মঙ্গলের বিষুবীয় অঞ্চলে তুষার বা বরফের অস্তিত্ব একসময় অসম্ভব বলে মনে করা হতো বলে জানিয়েছেন ভ্যালেন্তিনাস। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, মঙ্গলের বিষুবীয় অঞ্চলে তুষার জমা অসম্ভব। পাতলা বায়ুমণ্ডল ও সূর্যের আলো মিলে এসব পর্বতচূড়ায় তাপমাত্রা থাকে অনেক বেশি। পৃথিবীতে আমরা যেমন পর্বতচূড়ায় তুষার জমতে দেখি, এরকম নয়। এই তুষারের অস্তিত্ব একদিকে যেমন দারুণ উত্তেজনাকর, তেমনি এটি ইঙ্গিত করছে, অন্যরকম কিছু ঘটছে এখানে, যার ফলে তুষার জমতে পারছে।’
তুষারের এই পাতলা আবরণ জমেছিল মঙ্গলে সূর্যোদয়ের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে। তারপর সূর্যোদয়ের ফলে এগুলো বাষ্পীভূত হয়ে গেছে। তুষারের এ আবরণ ছিল অত্যন্ত পাতলা—মানুষের চুলের মতো পলকা (এক মিলিমিটারের একশ ভাগের এক ভাগের মতো)। তবে তুষারের এই পাতলা আবরণই ছেয়ে ফেলেছিল আগ্নেয়গিরিগুলোর একটা বড় এলাকা। মূলত এ অঞ্চলের আর্সিয়া অ্যাসক্রেয়াস মন্স (Arsia Ascraeus Mons) এবং সেরাইউনিয়াস থোলাসে (Ceraunius Tholus) দেখা গেছে এই তুষার।
এ তুষার গলা পানি দিয়ে ভরে ফেলা যাবে প্রমিত আকৃতির ৬০টি অলিম্পিক সুইমিং পুল। মোট পানির পরিমাণ হবে প্রায় ১১১ মিলিয়ন বা ১১ কোটি ১০ লাখ লিটার—২৯.৪ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৯৪ লাখ গ্যালন। এই পানি বারবার মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডল ও পৃষ্ঠের মধ্যে বিনিময় হচ্ছে প্রতিদিন। বর্তমানে মঙ্গলে শীতকাল চলছে। এ সময়ে মঙ্গলের দিনের দৈর্ঘ্য হয় সাড়ে ২৪ ঘণ্টার মতো।
আর্সিয়া অ্যাসক্রেয়াস মন্স এবং সেরাইউনিয়াস থোলাসের চূড়ায় রয়েছে গভীর খাদ। এর নাম ‘ক্যাল্ডেরাস’ খাদ। অগ্ন্যুৎপাতের সময় তৈরি হয়েছে এসব খাদ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর ফলে অদ্ভুতভাবে বায়ু চলাচলের কারণে থার্সিস অঞ্চলে তৈরি হয়েছে আলাদা মাইক্রোক্লাইমেট বা বিচ্ছিন্ন ‘খুদে জলবায়ু’। এই বিচ্ছিন্ন জলবায়ুই মঙ্গলের এ অঞ্চলে তুষার জমার সুযোগ করে দিয়েছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন টিজিওর কালার অ্যান্ড স্টেরিও সারফেস ইমেজিং সিস্টেমের প্রধান এবং ইউনিভার্সিটি অব বার্নের গবেষক নিকোলাস টমাস। ‘পর্বতের ঢালু গা বেয়ে বাতাস ওপরে উঠে যায়, সঙ্গে নিয়ে আসে পৃষ্ঠের কাছের তুলনামূলক আর্দ্র বায়ু। এটা আমরা পৃথিবী এবং মঙ্গলের অন্য অঞ্চলেও ঘটতে দেখেছি।’
তিনি আরও জানান, ‘এই তুষার ক্যাল্ডেরাসের ছায়াময় অঞ্চলে জমে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চল তুলনামূলক শীতল, সেসব জায়গায়।’ এতদিন কেন এ তুষার দেখা যায়নি, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ভ্যালেন্তিনাস। তাঁর ভাষ্য থেকে সংক্ষেপে বলা যায়, ভোর রাতে মঙ্গল পর্যবেক্ষণের চেয়ে সন্ধ্যার দিকেই বেশির ভাগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান মঙ্গল পর্যবেক্ষণ করে। সেটা সুবিধাজনক। তার ওপর এই তুষার জমে মঙ্গলের শীতকালে।
আর শীতকাল স্থায়ী হয় প্রতিবছর মাত্র চার মাসের মতো। দুইয়ে মিলে এটা পর্যবেক্ষণের সুযোগ খুবই কম। ফলে একদম এর নিশ্চিত অবস্থান জানা থাকলে দেখার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া ভাগ্যের সহায়তার বিষয়ও আছে। এসব মিলেই এতদিন দেখা যায়নি এ তুষার। ভবিষ্যতে মানুষের মঙ্গল অভিযান এবং মঙ্গলে জীবনের সন্ধান—দুদিক থেকেই এ আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিস্তারিত বুঝতে এ নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাবেন বিজ্ঞানীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।