মধুর সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক। বেনজীর আহমেদকে সভাপতি হিসেবে চাইছে ক্রীড়াঙ্গনের দুটি ফেডারেশন। র্যাবের মহাপরিচালক হওয়ার পর থেকে তিনি দাবা ফেডারেশনের সভাপতি, এখন পুলিশের মহাপরিদর্শক হলেও তাঁর উষ্ণ আলিঙ্গন ছাড়তে চায় না দেশের দাবা। ওদিকে কাবাডি ফেডারেশন নেমেছে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। দীর্ঘকালীন প্রথা মেনে পুলিশের মহাপরিদর্শককে কাবাডির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
জুনের ১৪ তারিখ শেষ হচ্ছে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির মেয়াদ। কয়েক মাস আগে থেকে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করলেও করোনাকালে সরকারের যাবতীয় বিধি-নিষেধে আটকে গেছে নির্বাচন। আর কদিন বাদেই এই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে। তাই এ মাসের শুরুতে নতুন অ্যাডহক কমিটির প্রস্তাব দিয়ে দাবা ফেডারেশনের সভাপতি বেনজীর আহমেদ এক চিঠি পাঠিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বরাবরে। নিজের স্বাক্ষরিত চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল হলে দাবা ফেডারেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যক্রম গ্রহণ করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৫ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় বলে পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দাবা ফেডারেশনের প্রস্তাবিত কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন।’ প্রস্তাবিত ২৫ সদস্যের এই অ্যাডহক কমিটিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো আবুল খায়ের গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ চৌধুরীর সহসভাপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্তি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির পর এই অ্যাডহক কমিটিকে অনুমোদন দিতে অনুরোধ করেছেন দাবার সভাপতি।
দাবার এই চিঠির পরপরই জেগে ওঠে কাবাডি ফেডারেশনও। বিদায়ি পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে জাবেদ পাটোয়ারীর স্থলাভিষিক্ত বেনজীর আহমেদকে পেতে চাইছে তারা ফেডারেশন সভাপতি হিসেবে। এ জন্য তারা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধও করেছে। ‘দু-এক দিন আগে আমার কাছে একটা চিঠি এসেছে। কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি রাষ্ট্রদূত হয়ে গেছেন। তাই শূন্য পদে তারা বর্তমান আইজিপিকে সভাপতি করার অনুরোধ করেছে। কয়েকটি ক্রীড়া ফেডারেশন বাদে বাকিদের সভাপতি মনোনীত করে সরকার’, বলেছেন ক্রীড়া পরিষদ সচিব মাসুদ করিম। কাবাডিতে মরহুম হাবিবুর রহমান মোল্লার পর থেকেই শুরু হয় পুলিশের মহাপরিদর্শকের সভাপতি হওয়ার ধারা। গত দুই দশকে এটা প্রথা হয়ে দাঁড়ালেও ক্রীড়া পরিষদ সচিব বলছেন, ‘এটা কোনো আইন নয় যে, কাউকে নির্দিষ্ট কোনো ফেডারেশনের সভাপতি করতেই হবে।’
এদিকে দাবা ফেডারেশনও তাদের সভাপতিকে ছাড়তে চায় না। ফেডারেশন সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম মনে করেন, ‘র্যাবে থাকাকালীন বেনজীর সাহেবকে আমরা পেয়েছি, এখন উনি আইজিপি হয়েছেন। উনার নেতৃত্বে দাবা একটা জায়গায় পৌঁছেছে, তাই তাঁকে আমরা হারাতে চাই না। তিনি থাকলে খেলাটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটা ভালো জায়গায় পৌঁছে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তা ছাড়া তিনি দক্ষিণ এশীয় দাবা কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দাবায় তাঁর খুব আগ্রহ আছে।’ এটা ঠিক, দাবার গত বছরের আয়োজন ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এক বছরে তিনটি আন্তর্জাতিক দাবা টুর্নামেন্টের মধ্যে ছিল এশিয়ান সিটিজি দাবা ও সার্ক দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। কিন্তু কাবাডি ফেডারেশন যে তাঁকে পাওয়ার দাবি তুলেছে! শাহাবুদ্দিন শামীমের জবাব, ‘পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাবাডির সভাপতি হওয়াটা লিখিত কোনো আইন নয়। তবে আমরা মনে করি, দাবার উন্নয়নের জন্য আইজিপিকে খুব দরকার। দাবাকে আরো ওপরে নিয়ে যেতে হলে তাঁকে লাগবে। এই কথাগুলো আমি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে বুঝিয়েছি।’
কাবাডি ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মান্নান বলেছেন, ‘সাধারণত আইজিপি মহোদয়ই আমাদের ফেডারেশনের সভাপতি হন। তিনি যেহেতু একটা ফেডারেশনে আছেন মন্ত্রণালয় চাইলে এখন দুটি ফেডারেশনের দায়িত্ব দিতে পারেন তাঁকে।’ তবে দেশে কখনো দুটি ক্রীড়া ফেডারেশন এক সভাপতির অধীনে ছিল না। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলও এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন, ‘দুটি ফেডারেশনের সভাপতি একজন, এটা কখনো হয়নি। উনি (পুলিশ মহাপরিদর্শক) দাবা ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে আছেন অনেক দিন ধরে। আবার কাবাডিতেও আইজিপির সভাপতি হওয়ার সংস্কৃতি আছে। এ ক্ষেত্রে উনার সঙ্গে কথা বলেই আমি সিদ্ধান্ত নেব। তিনি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তাঁর পছন্দ-অপছন্দেরও একটি ব্যাপার আছে।’
তত দিন পর্যন্ত সভাপতি নিয়ে একজনকে পাওয়া নিয়ে দুই ফেডারেশনের অভূতপূর্ব টানাটানি চলবে!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।