জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার জানেরচালা এলাকায় বহু বছরের পুরনো একটি পুকুর ইজারা নিয়েছেন আমীর আলী নামে এক ব্যক্তি। পুকুরটির নাম ষাঁড়ের পুকুর। অনেক বছর আগে এক জমিদার পুকুরটি খনন করেন। কিন্তু তখন পুকুরে পানি উঠেনি। পুকুরটি শুকনোই থেকে যায়।
একদিন ওই জমিদার স্বপ্ন দেখেন পুকুরে দুটি ষাঁড় (ষাঁড় গরু) ছেড়ে দিতে হবে তাহলেই পুকুরে পানি উঠবে। পরে ওই জমিদার দুটি ষাঁড় ওই পুকুরে ছেড়ে দেয়। এরপর ষাঁড় দুটির মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। এক পর্যায়ে পুকুরে পানি ওঠে এবং ষাঁড় দুটি অদৃশ্য হয়ে যায়। সেই থেকে পুকুরটি ষাঁড়ের পুকুর নামে পরিচিতি পায়। বর্তমানে এর নামকরণ করা হয়েছে ষাঁড়ের পুকুর পাক দরবার শরীফ। কিন্তু আধুনিক যুগেও মানুষ ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে ছুটে যায় সেই পুকুরে। সেখানে গিয়ে মানত করলেই পূরণ হবে মনোবাসনা। তাই নানান আশা নিয়ে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ ছুটে যায় সেই পুকুরে।
মনোবাসনা পূরণের আশা নিয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ টাকা ফেলছে পুকুরে। আর সেই টাকা যাচ্ছে খাদেমের ফাঁদ পাতা জালে।
পুকুরপাড়ে রয়েছে দুইটি বটগাছ। বটগাছ দুটির নিচে চারপাশ ইট সিমেন্ট দিয়ে বাঁধাই করা। গাছের গোড়ায় লাল কাপড় পেঁচানো সেখানে জ্বালিয়ে রাখা হয় আগরবাতি-মোমবাতি। মানত পূরণ হলে অনেকেই সেখানে গিয়ে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি জবাই করে খিচুড়ি রান্না করে নিজেরা খায় এবং মানুষের মধ্যে বিতরণ করে। সেখানে অনেকেই নিজেকে পরীক্ষা করে নেয় পুকুরে টাকা ফেলে। এজন্য ১০ টাকা থেকে এক হাজার টাকার নোট ভাসিয়ে দেয় পুকুরে। যার টাকা পুকুরের পানিতে ডুবে যায় তিনি ভালো মনের মানুষ, তার মন স্বচ্ছ এবং তার মনোবাসনা পূরণ হবে এমন ধারণাই ওইসব মানুষের। তবে সবার টাকাই পুকুরে ডুবে যায়। কিন্তু তারা জানে না সেই টাকাগুলো পুকুরের কোথায় যায়। আসলে টাকাগুলো জমা হয় পানির নিচে খাদেমের ফাঁদ পাতা জালে। কারণ ষাঁড়ের পুকুর পাক দরবার শরীফের খাদেম আগে থেকেই ওই পুকুরের নিচে মাছ ধরার জাল বিছিয়ে রেখেছেন। সারাদিনে মানুষ যত টাকা পুকুরে ফেলুক না কেন, তা সব জমা হয় খাদেম আমীর আলীর জালে। সন্ধ্যার পরে সেই টাকা তুলে আনা হয় পুকুর থেকে। পরে ওই টাকা রোদে শুকিয়ে খাদেম নিয়ে নেন। তবে এর মধ্যে কিছু টাকা পুকুর পাড়ে গান বাজনা ও খাওয়া-দাওয়া বাবদ খরচ করা হয়।
অনেকেই ওই পুকুরের নোংরা পানি দিয়ে গোসল করছে। কেউ হাত মুখ ধুচ্ছে, কেউ অজু করছে, আবার কেউ কেউ বোতল ভরে ওই পুকুরের পানি নিয়ে যাচ্ছে। তবে আজ পর্যন্ত কারো মনোবাসনা পূরণ হয়েছে কিনা তা নির্দিষ্ট করে কারো জানা নেই।
রোগবালাই থেকে মুক্তি, নির্বাচনে জয়ী হওয়া, অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া, বিয়ে-সন্তান হওয়া, শত্রুকে পরাজিত ও মামলায় জয়ী হওয়াসহ বিভিন্ন মনোবাসনা নিয়েই মানুষ যায় ষাঁড়ের পুকুরে। তবে সপ্তাহে দুই দিন রোববার ও বৃহস্পতিবার মানুষের ভিড় থাকে বেশি। আসলে টাকা ডুবলেই মনোবাসনা পূরণ হবে মানুষের এই ধারণাটি ভুল।
সচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আধুনিক যুগের মানুষ হয়েও এমন কুসংস্কার বিশ্বাস করছে। যেকোনো মানুষ পানিতে টাকা ফেললে তা ডুবে যাবে। তাই বলে কি টাকা পানিতে ডুবলে মানুষের মনোবাসনা পূর্ণ হবে?
কালিয়াকৈরের ফুলবাড়িয়া থেকে আসা আরিফুল ইসলাম জনি বলেন, মানুষের মুখে শুনে ষাঁড়ের পুকুর দেখতে এসেছি। পুকুরের পানিতে টাকা ডুবলে মানুষের মনের ইচ্ছা পূরণ হবে এটা কেমন কথা। সব টাকা তো পানিতে ডুবে। আসলে এটা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না। কিছু মানুষ কুসংস্কার ছড়িয়ে এভাবে মানুষকে ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
চন্দ্রা এলাকা থেকে মামুনুর রশিদ নামে এক যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন ষাঁড়ের পুকুর পাক দরবার শরীফে। মোটরসাইকেল থেকে নেমেই তিনি সোজা চলে যায় পুকুরে। পাড়ে বসে ১০০ টাকার নোট ফেলে দেয় পুকুরে। পরে সেই টাকার উপর পানি ছিটিয়ে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিলে টাকাটি পানিতে তলিয়ে যায়।
তিনি বলেন, পুকুরে কিছু হাদিয়া দিলাম। আমার মনের চাওয়া পাওয়া চাইলাম। এখানে কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকলে তা পূর্ণতা পায়, এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই এখানে এসেছি।
সূর্যবানু নামে এক নারী বলেন, আমার দুটি মেয়ে ছিল, কোনো ছেলে ছিল না। এতে আমার স্বামী সন্তুষ্ট ছিল না। পরে আমি ষাঁড়ের পুকুরে এসে গোসল করে পানি পান করি এবং ছেলে চাইলাম। পরে আমার দুই ছেলে হয়েছে।
ষাঁড়ের পুকুর পাক দরবার শরীফের খাদেম আমীর আলী বলেন, পুকুরটি ইজারা নিয়েছি। পুকুরে টাকা ফেলে অনেকে মানত করছেন মনোবাসনা পূরণ হওয়ার জন্য। যাদের মনোবাসনা পূরণ হয় তারা এখানে এসে গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি জবাই করে তবারক বিতরণ করে। যেখানে টাকা ফেলা হয় তার নিচে জাল বিছিয়ে রাখা হয়েছে। পরে টাকা গুলো তুলে রোদে শুকিয়ে তা ব্যবহার উপযোগী করা হয়।
এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। পুকুরটি কালায়াকৈর পৌরসভা থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে কি কাজের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। সূত্র – বাংলানিউজ২৪
সীতাকুণ্ডের ঘটনায় যেভাবে ৩০ জনের প্রাণ বাঁচান দোকানদার হানিফ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।