জুমবাংলা ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোটে যে তিরিশটি আসনে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোটগ্রহণ হয়েছে তার মধ্যে ছিল নন্দীগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন, যে আসনে জিতে ১৪ বছর আগে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পথ করে নিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। খবর বিবিসি বাংলার।
এই আসনটিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারই একসময়কার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র শুভেন্দু অধিকারী, যিনি দল বদল করে এখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন এবং লড়ছেন বিজেপির প্রার্থী হিসাবে।
এই আসনে জয় পরাজয় দুই প্রার্থীর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
নন্দীগ্রাম থেকে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, সেখানে দুই প্রার্থীর মধ্যে খুবই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে এবং সকাল থেকে পুরো নির্বাচনী এলাকা ঘুরে তিনি দেখেছেন ভোট দেবার জন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে লম্বা লাইন।
প্রচুর ভোট পড়েছে গোটা এলাকার বিভিন্ন ভোটদান কেন্দ্রে এবং মি. ভট্টশালী বলছেন, লাইনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
ভোট গ্রহণ শেষ হবার আধ ঘন্টা আগে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নির্বাচন কমিশনের দেয়া হিসাব মতে নন্দীগ্রামে ৮০% ভোট পড়েছে।
নন্দীগ্রাম বড় পরীক্ষা
এই নন্দীগ্রামেই ১৪ বছর আগে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পথ করে নিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।
অনেকেই বলছেন, নন্দীগ্রাম আসনের ফলাফলের ওপর মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে।
এবার তিনি নিজেই লড়ছেন নন্দীগ্রামের বিধানসভা আসনে।
তার প্রতিপক্ষ তারই একসময়কার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি দল বদল করে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
মি. অধিকারী দলের হয়ে নন্দীগ্রামে প্রচারণা চালিয়েছেন মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরোধিতা করে এবং ধর্মীয় মেরুকরণের ভিত্তিতে।
মিজ ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ভাবে মুসলিম তোষণের অভিযোগ ছিল নন্দীগ্রামে বিজেপির প্রচারণার একটা বড় হাতিয়ার।
নন্দীগ্রামে দুটি ব্লক মিলিয়ে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা ২৬ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে নন্দীগ্রামে যে মেরুকরণ হয়েছে, এলাকার রাজনীতিতে আগে কখনও এত ব্যাপকভাবে ধর্মীয় মেরুকরণ দেখা যায়নি।
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের প্রচারণায় এলাকার উন্নয়নের বিষয়টির ওপর জোর দেবার পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীর দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করাকে তার “বিশ্বাসঘাতকতা”র একটা ভাবমূর্তি হিসাবে প্রচারণায় তুলে ধরেছে।
কী বলছেন ভোটাররা?
মমতা ব্যানার্জির সরকার এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছে বলে একজন নারী ভোটার জানান বিবিসি বাংলাকে। বলেন মমতা ব্যানার্জিই এলাকায় জিতবেন বলে তার বিশ্বাস।
কিন্তু আরেকজন ভোটার স্পষ্ট জানান, এখন ভোটের জন্য নন্দীগ্রামে এসেছেন দিদি (মমতা ব্যানার্জি)। গত দশ বছরে কবার তিনি এসেছেন নন্দীগ্রামে?
আরেক ভোটার বললেন, কে জিতবে বলা খুবই মুশকিল, কিন্তু তার মনে হয় শুভেন্দু বাবুই জিতবেন।
আরেকজন নারী ভোটারও বললেন, আমরা মমতা ব্যানার্জির কাছে অনেক পেয়েছি। আমরা তাকেই চাইছি।
শান্তিপূর্ণ ভোট
নন্দীগ্রামে ভোটের দিন সহিংসতার আশংকায় প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে সেখানে এক হাজারেরও বেশি কেন্দ্রীয় পুলিশ মোতায়েন করেছিল।
এলাকার মানুষও ভয়ে ছিলেন। কিন্তু এসব আশংকা অমূলক প্রমাণিত হয়েছে এবং ভোট গ্রহণ হয়েছে নির্বিঘ্নে।
একজন ভোটার জানান, গতকাল পর্যন্ত ভয় ছিল এলাকায় মারামারি হতে পারে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বা অঘটন ঘটতে পারে, কিন্তু আজ সব ঠিকঠাক ছিল।
বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনায় পাথর ছোঁড়া, বুথ জ্যাম করা এবং কয়েকটি এলাকায় ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয়ার অভিযোগ ছাড়া বড়ধরনের কোন অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি।
অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, বেলার দিকে একটি বুথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজে গিয়ে অভিযোগ করেন যে সেখানে তার সমর্থকদের ঢুকতে বাধা দেয়া হচ্ছে।
তিনি সেখানে প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান করেন। সেসময় সেখানে বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের বড় জমায়েত হয়ে যায় এবং খুব উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেখানে উপস্থিত পুলিশ বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে মিজ ব্যানার্জি এলাকা ছেড়ে যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।