মলদ্বার না কেটেও যেভাবে করা যায় পাইলস অপারেশন

লাইফস্টাইল ডেস্ক : পাইলসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, মলদ্বারে মাংসপিণ্ড ফুলে ওঠা, যা কখনো কখনো মলদ্বারের বাইরে ঝুলে পড়ে এবং হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হয়ে।

পাইলস দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করালে নানা জটিলতা দেখা দেয়। অনেক সময় অস্ত্রোপচার করা লাগে। মলদ্বার না কেটেও অস্ত্রোপচার করা যায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইডেন মাল্টি কেয়ার হাসপাতালের কলোরেক্টাল সার্জন অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক।

পাইলসের চিকিৎসা হিসেবে আদিকাল থেকে বিভিন্ন পদ্ধতি চলে এসেছে। যেমন— ইনজেকশন পদ্ধতি, রিংলাইগেশন পদ্ধতি ও অপারেশন।

রিংলাইগেশন পদ্ধতির ফল ভালো। ৮০-৯০ শতাংশ পাইলস রোগী এ পদ্ধতিতে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

মলদ্বার না কেটেও যেভাবে করা যায় পাইলস অপারেশন
ফাইল ছবি

১০-২০ শতাংশ রোগীর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।  বিশেষ করে যাদের পাইলস বড় হয়েছে এবং বাইরে বেরিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় প্রচলিত আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা অপারেশন করে থাকি। এ অস্ত্রোপচারের ফলে মলদ্বারের চতুর্দিকে তিন জায়গায় বেশ কিছু জায়গা কেটে ফেলে দিতে হয়।  ফলে অপারেশনের পর প্রচুর ব্যথা হয়, মলত্যাগের পর ব্যথা বেড়ে যায়, অনবরত সামান্য রক্ত ও পুঁজের মতো নিঃস্বরণ হয়। ফলে ক্ষতস্থান শুকাতে ১-২ মাস সময় লাগে। অফিস থেকে অন্তত এক মাস ছুটি নিতে হয়।

অস্ত্রোপচারের পর ক্ষেত্রভেদে মলদ্বার সংকুচিত হয়ে জীবন দুর্বিষহ করে তোলে আবার পায়খানা আটকিয়ে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। এরূপ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রোগীকে এক থেকে দেড় মাস কাটাতে হতে পারে।

ইতালির ইউনিভার্সিটি অব প্যালেরমোর অধ্যাপক ডা. এন্টনিও লংগো ১৯৯৩ সালে মলদ্বার না কেটে অস্ত্রোপচারের অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এ পদ্ধতিতে পাইলসটিকে একটি ঝুলেপড়া মাংসপিণ্ড হিসেবে মনে করা হয়।
এই ঝুলে পড়া মাংসপিণ্ডের ভেতর অসংখ্য শিরা মলত্যাগের সময় প্রচণ্ড চাপে রক্তপাত ঘটায়। বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে অপারেশনের ফলে ঝুলেপড়া পাইলস ভেতরে ঢুকে যাবে। এ পদ্ধতিতে আসলে পাইলসের স্থানে বা মলদ্বারে কোনো কাটাছেঁড়া হয় না।

স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে কাটাছেঁড়া হয়, তবে তা মলদ্বারের অনেক গভীরে থাকে। এই যন্ত্রটি রেকটামের ভেতর একটি চক্রাকার মাংসপিণ্ড কেটে নিয়ে আসে। কাটাছেঁড়া করে ওই যন্ত্রটিই আবার সেলাইও সেরে দেয়।

এ কারণে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। ক্ষতস্থান থাকে না বলে শুকানোর প্রশ্ন আসে না। মলদ্বারের অনেক গভীরে যে স্থানটির নাম রেকটাম সেখানে কোনো ব্যথার অনুভূতি নেই। তাই এই অস্ত্রোপচারের পর কোনোরূপ ব্যথাও হয় না।

তবে মলদ্বারে কিছু নাড়াচাড়া করা হয়, যার ফলে অপারেশনের পর অল্প ব্যথা হতে পারে। এ পদ্ধতিতে পাইলসের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ রেকটামের ভেতর অপারেশনের ফলে পাইলসের রক্ত সরবরাহের শিরাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
গঠনগত দিক থেকে মলদ্বার সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে। মলদ্বারে সামান্যতম কোনো কাটাছেঁড়া নেই। যার কারণে অস্ত্রোপচারের পর প্রচণ্ড ব্যথা নেই। রক্ত বা পুঁজ পড়ার সমস্যা নেই।

এ অস্ত্রোপচারের পর মলদ্বার সরু হয়ে যাওয়ার সমস্যা নেই। দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই।  দীর্ঘদিন বিশ্রাম বা ছুটি নেওয়ারও প্রয়োজন নেই।  তথ্যসূত্র- যুগান্তর

হোয়াটসঅ্যাপ চলবে ইন্টারনেট ছাড়াই