নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ও বরমী ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে চলা নদীটির নাম মাটিকাটা। এর এক প্রান্ত কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামের খিরু নদে যুক্ত। অপর অংশ বরমী বাজার অংশে শীতলক্ষ্যার সঙ্গে মিশেছে। ১৫ কিলোমিটার নদীটি এখন যেন খালে পরিণত হয়েছে। ব্যঙ্গ করে অনেকে বলেন, মাটিকাটা এখন ‘মাটিভরাট’ নদী।
নদীতীরের দুই পাশের বাসিন্দারা জানান, একসময় মাটিকাটা নদী দিয়ে আশপাশের অঞ্চলের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য পণ্য আনা-নেওয়া করত। দখল আর দূষণে ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে গেছে নদীটি। একসময় দেশীয় প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য থাকলেও দূষণের কারণে তা-ও আর নেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাশের ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বেশ কয়েকটি কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত পানি বাগড়াপাড় এলাকা দিয়ে খিরু নদ হয়ে মাটিকাটা নদীতে পড়ছে। শুকনো মৌসুমে এমনিতেই পানি কমে যায়, তা-ও আবার দূষণে কালো হয়ে গেছে।
শ্রীপুর উপজেলার হয়দেবপুর গ্রামের জোলাপাড়া, ধামলই গ্রামের পালোয়ানবাড়ি, চৌরাস্তা, কুমারবাড়ি, গলদাপাড়া গ্রামের বারেক মেম্বারের বাড়িসংলগ্ন, সোনাব চৌধুরীঘাট, ভিটিপাড়া গ্রামের গোলাঘাট, বরকুল গ্রামের বরমী ব্রিজ, কালীমন্দিরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে মাটিকাটা নদী দখল করে ফসল লাগানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজনই এভাবে নদীটিকে খালে পরিণত করেছে।
কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের জেলে মোস্তফা কামাল বলেন, বছর পাঁচেক আগে মাটিকাটা নদীতে মাছ শিকার করে এই অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক জেলে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
কয়েক বছর ধরে নদীতে তেমন মাছের দেখা মেলে না। শুধু বর্ষাকালে অল্প মাছ শিকার করা যায়। বর্ষার পরপরই নদীর পানি কমে বিষে ভরে যায়।
সোনাব গ্রামের কৃষক খায়রুল চৌধুরী বলেন, ‘একসময় আমরা পারের শত শত বিঘা জমিতে মাটিকাটা নদীর পানি দিয়ে সেচ দিতাম। আজ তো নদীতে তেমন পানি নেই। কেমিক্যাল মেশানো পানি ধানের জমিতে দিলে ধানের ক্ষতি হয়। এ জন্য আজ নদীর পানি সেচকাজে ব্যবহার করতেও সমস্যা হচ্ছে।’
ভিটিপাড়া গ্রামের কৃষক সুলতান উদ্দিন বলেন, নদীর পানিতে গোসল করালে গরুর শরীরে নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। দখল আর দূষণের কারণে মাটিকাটা কোনো কাজে আসছে না।
নদীর পাড় ভরাট করে বীজতলা করেছেন সোনাব গ্রামের কৃষক হযরত আলী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশপাশের সবাই তো ভরাট করছে; তাই আমিও একটু ভরাট করছি। সবাই ছেড়ে দিলে আমিও ছেড়ে দিব।’
বলদীঘাট বাজারের ব্যবসায়ী মো. সেলিম বেপারী বলেন, ‘একসময় আমার বাপ-চাচারা নৌকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী বরমী বাজার থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। এখন বর্ষাকালে সামান্য পানি থাকে। সারা বছর তেমন পানি থাকে না।’ নতুন করে খননের মাধ্যমে মাটিকাটা নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মত দেন তিনি।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘একটা সময় মাটিকাটা নদীটি স্বচ্ছ পানির নদী ছিল। একেবারে চোখের সামনে ইচ্ছা করে যেন মেরে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসন একটি জায়গায় ব্যর্থতার পরিচয় দেয়; তা হলো যখন দখল শুরু হয়, তখন তা বন্ধ করে না এবং যখন দূষিত পদার্থ কেউ ছেড়ে মাছগুলো মেরে ফেলে, তখন তা চিহ্নিত করে না। দখল-দূষণ বন্ধে পুরো একটি ডেটাবেইস হাতে নিয়ে অভিযান চাই।’
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন, উপজেলার অন্যতম নদী মাটিকাটাসহ অন্যান্য নদী কীভাবে দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা যায়, এ বিষয়ে একটি সঠিক পরিকল্পনা করে কাজ করা হবে। এ ছাড়া দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।