এলাকায় কোনো মানুষ মরলেই মুচকি হাসতেন বাপ্পি। অংশ নিতেন তাদের জানাজাতেও। আর রাতের আঁধারে নতুন কবরের লাশ তুলে নিজের বাসায় নিয়ে আসতেন। শেষমেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। কিন্তু এরপরও থামছে না লাশ চুরি।
ময়মনসিংহে গত এক বছরে ২০টিরও বেশি লাশ চুরি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নতুন কবর খুঁড়ে এসব লাশ চুরি করে চোরচক্র। পুলিশের অভিযানে ২০২০ সালের নভেম্বরে বাপ্পি ধরা পড়লেও অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১৭ জুন রাতে ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালী জামে মসজিদের কবরস্থানে কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে। সেখানে তিনটি কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি করে চক্রটি।
২০২০ সালের অক্টোবরে ত্রিশালের ভাটিপাড়া গ্রাম থেকে আটটি ও মার্চে ফুলপুরের তারাপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে ১০টি কঙ্কাল চুরি হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালে গৌরীপুর উপজেলার ভাঙ্গনামারি গ্রামে এবং ২০১৭ সালে ময়মনসিংহ সদরের খাগডহরে ও হালুয়াঘাট উপজেলার দড়িনগুয়া গ্রামে কবর থেকে একাধিক কঙ্কাল চুরি হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ময়মনসিংহের বিভিন্ন গ্রামের কবর থেকে লাশ চুরির ঘটনা ঘটলেও এসব উদঘাটনে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। এসব চুরির সঙ্গে কঙ্কাল পাচারকারী চক্রের যোগসাজশ রয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
অবশ্য সেই যোগসাজশের প্রমাণ মেলে গত বছরের নভেম্বরে চক্রের অন্যতম হোতা মো. বাপ্পিকে গ্রেফতারের পরই। নগরীর আরকে মিশন রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মানুষের ১২টি মাথার খুলি ও দুই বস্তা হাড়। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় বিশেষ কেমিক্যাল। যা দিয়ে মানবদেহ দ্রুত পচানো ও কঙ্কাল প্রক্রিয়াজাত করতেন তিনি।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তখন বেরিয়ে এসেছিল চাঞ্চল্যকর তথ্য। মানুষের মৃত্যুর খবর পেলেই জানাজায় অংশ নিতেন বাপ্পি। জানাজায় অংশ নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতেন। এরপর রাতের আঁধারে নতুন কবরের লাশ তুলে নিজের বাসায় নিয়ে আসতেন। তবে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এ কাজটি করতো চক্রটি।
একেক দলের কাজ একেক রকম। লাশ চুরি, রাসায়নিক ব্যবহার, প্রক্রিয়াজাতকরণ, কঙ্কাল আনা-নেয়া, সরবরাহ করা ইত্যাদি। এর একেকটি কাজ একেকজন করতেন বলে পুলিশকে তথ্য দিয়েছিলেন বাপ্পি। সেই সঙ্গে বাপ্পির ই-মেইল ঘেঁটে ভারত ও নেপালের কঙ্কাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসূত্র পায় পুলিশ।
স্থানীয় অনেকের ধারণা, চুরি হওয়া কঙ্কাল বিদেশে পাচার ছাড়াও মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করা হয়। এক চিকিৎসকের কাছে কথা বলে এমন ইঙ্গিতও মিলেছে।
জানা গেছে, একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রথম বর্ষেই অধ্যয়নের সুবিধার জন্য ব্যক্তিগতভাবে কঙ্কাল কিনতে হয়। প্রতিটির দাম পড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। যদিও তারা এসব কঙ্কাল সিনিয়রদের কাছ থেকে কিনে নেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে বাইরে থেকেও এসব কঙ্কাল কেনা হয়।
মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা বেওয়ারিশ লাশ অ্যানাটমি অধ্যয়নের কাজে ব্যবহার করেন শিক্ষার্থীরা। চুরি করা কঙ্কাল তাদের কিনতে হয় না। যদিও এ ব্যাপারটি এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. চিত্তরঞ্জন দেবনাথ বলেন, পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের কঙ্কালের প্রয়োজন হয়। সেজন্য হাসপাতালের মর্গে যেসব লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে থাকে সেগুলোকে আমরা নিয়ে আসি। সেগুলোই পরে প্রসেসিং করে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়।
কঙ্কাল চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের এসপি মো. আহমার উজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের নজরদারি রয়েছে। এ নিয়ে কাজও করছি। সাম্প্রতিক সময়ে একজনকে গ্রেফতারের পর কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। সেগুলোও খতিয়ে দেখছি। সেই সঙ্গে চক্রের অন্যদের গ্রেফতারে আমাদের চেষ্টা চলছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।