জুমবাংলা ডেস্ক: করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে ৯০০ কোটি টাকা লোপাটের টার্গেট ছিল জেএমআই হাসপাতাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাকের। কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই করোনা দুর্যোগের মধ্যে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) তৎকালীন পরিচালক একক ক্ষমতাবলে জেএমআইকে ৯০০ কোটি টাকার কাজ দিয়েছিলেন। করোনাসামগ্রী ‘এন-৯৫ মাস্ক’ কেনার আগে সিএমএসডি পক্ষ থেকে কোনো ধরনের দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এমনকি পণ্যের দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের আজকের সংখ্যায় প্রকাশিত সিনিয়র সাংবাদিক আবুল খায়েরের করা একটি বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে ।
মাস্ক ও পিপিইসহ নিম্নমানের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহের মামলায় গ্রেপ্তার জেএমআই গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মঙ্গলবার হেফাজতের আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
কমিশনের উপপরিচালক নুরুল হুদা মঙ্গলবার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ রাজ্জাকসহ সাত জনের বিরুদ্ধে ওই মামলা করেন। এরপর দুপুরের দিকে কমিশনের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে একটি দল সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করে।
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ১৫ জুন দুদক কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন শিবলীকে প্রধান করে চার সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। এরপর ওই সাত আসামিসহ আরো বেশ কয়েক জনকে অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের অনুসন্ধান টিম। তিন মাস অনুসন্ধান শেষে মামলাটি দায়ের করা হলো।
এক জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা নিম্নমানের মাস্ক ব্যবহার করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেক ডাক্তার-নার্স মারা যান। বর্তমান সরকারকে বিপদে ফেলতেই নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছিল। ওই সময় এটা নিয়ে হইচই পড়ে যায়। সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ওই সময় জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে দুদক অনুসন্ধানে মাঠে নামে।
স্বাস্থ্য খাতে কোনো দুর্নীতি ধরা পড়লে শুধু চুনোপুটিরা গ্রেফতার হয়। কিন্তু গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জাতীয় দৈনিকটিকে বলেন, তদন্তে যাদের নাম আসবে সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। কাউকে ছাড়ব না।
দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য খাতে দুদকের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
করোনা দুর্যোগকালে আমেরিকায় উত্পাদিত এন-৯৫ এর কোনো পণ্য চালান দেশেই আসেনি। অথচ মহামারির সুযোগে ভুয়া মাস্ক তৈরি করে এন-৯৫ এর প্যাকেটে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইস নামের ওই দেশীয় কোম্পানি। তারা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নিজস্ব কারখানায় মাস্ক উত্পাদন করে এন-৯৫ বলে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে হস্তান্তর করে। সেখান থেকে এই মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়, সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের মাধ্যমে জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ করা হয়।
এই নকল মাস্ক সরবরাহের পর প্রথম প্রতিবাদ আসে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে। এই হাসপাতালের এক পরিচালক ভুয়া এন-৯৫ মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু এসব বিষয় আমলে নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে উলটো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাফাই গেয়ে প্রতিবাদ দেয় সিএমএসডি। এমনকি যারা এ নিয়ে সমালোচনা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।