আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা কতটা নির্মমতা ছড়িয়ে দিলে মানব সমাজে! রক্তের বন্ধনও যে ঢিলে হয়ে গেছে। কোথাও সন্তানের নির্মমতার শিকার হচ্ছেন মা-বাবা আবার কোথাও নির্মমতার শিকার সন্তানই।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার শ্যামপুকুর থানা এলাকা এমনই এক নির্মমতার সাক্ষী হলো।
আনন্দবাজার জানায়, করোনায় শহরজুড়ে লকডাউন। রাস্তাগুলো সুনসান। এরই মধ্যে শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় শ্যামপুকুর থানায় ডিউটি অফিসারের সামনে হঠাৎ হাজির এক বৃদ্ধ।
নিজেকে বংশীধর মল্লিক পরিচয় দিয়ে তিনি পুলিশকে জানান, ছেলেকে খুন করে এসেছেন! আত্মসমর্পণ করতে চান। অফিসার হতভম্ব। পরে সব শুনে বংশীধর বাড়িতে গিয়ে উদ্ধার করা হয় তার ছেলে শীর্ষেন্দুর (৪৫) দেহ।
পুলিশ জানিয়েছে, ৭৮ বছরের ওই বৃদ্ধ প্রতিদিন বিকেলে ছেলে শীর্ষেন্দুকে নিয়ে বেড়াতে বেরোন। ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং মৃগী রোগী। এদিনও তিনি বেরোনোর সময়ে ছেলেকে মাস্ক পরতে বলেন। কিন্তু ছেলে কিছুতেই তা পরতে রাজি হননি। বারবার বলেও রাজি না হওয়ায় ছেলের গলায় কাপড় পেঁচিয়ে খুন করেছেন বলে দাবি করেন বৃদ্ধ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা দেখেন, ঘরের মাটিতে পড়ে রয়েছে শীর্ষেন্দুর দেহ আর বিছানায় শুয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা। তিনি শীর্ষেন্দুর মা। সেরিব্রাল অ্যাটাকের পর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বছর ১৮ ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী তিনি।
মায়ের সামনেই ছেলেকে বংশীধর খুন করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী হওয়ায় ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে পারেননি মা।
জেরায় বংশীধর জানিয়েছেন, গত ১৮ বছর ধরে অসুস্থ স্ত্রী এবং অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে থাকতে থাকতে তিনি বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর সেই তিক্ততা থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বংশীধরের কোনো মানসিক অবসাদের ইতিহাস এখনো পাওয়া যায়নি। তবে মনে করা হচ্ছে, অসুস্থ স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘদিন থাকার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্ভবত জুড়ে যায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা। ছেলে মাস্ক না পরে বাইরে গেলে যদি সংক্রমণ হয়, সেই চিন্তাও হয়তো বাবাকে গ্রাস করেছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।