নিজস্ব প্রতিবদেক, গাজীপুর : গাজীপুরে মা-মেয়েকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় নিহত ফেরদৌসির জামাতাসহ (ভাতিজির প্রাক্তন স্বামী) ২ জনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।
শনিবার জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেজোয়ান আহমেদ, সহকারী পুলিশ কমিশনার (সদর জোন) রিপন চন্দ্র সরকার, সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সৈয়দ রাফিউল করিম উপস্থিত ছিলেন।
জিএমপির ওই কর্মকর্তা জানান, প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর প্রায় দুই বছর আগে গাজীপুর সদর উপজেলার খুদে বরমী এলাকার রবিউল ইসলামকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন দুই সন্তানের জননী ফেরদৌসী আক্তার (২৮)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের বড়াইয়া গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিন বসুর মেয়ে।
প্রথম সংসারের দু’সন্তান হাফসা আক্তার (১০) ও তাসমিয়া আক্তারকে (৪) নিয়ে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন ফেরদৌসি। তিনি গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাইয়ে দেন ভাতিজি লিমাকে। চাকুরি পাওয়ার পর প্রায় তিন মাস আগে লিমা তার স্বামী মহিউদ্দিন ওরফে বাবুকে ডিভোর্স দেন।
লিমাকে চাকরি পাইয়ে দেয়াটাই কাল হলো ফেরদৌসির। বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে ফুপুশাশুড়ি ফেরদৌসিকে দায়ী করেন বাবু। স্ত্রীকে ফিরে পেতে বাবু বিভিন্ন কবিরাজের কাছে ধর্না দিয়ে ব্যর্থ হন। এদিকে ইনস্যুরেন্সের পাওনা কিস্তির টাকা চাওয়ায় ফেরদৌসির উপর ক্ষুব্ধ হন বাবু। উভয় ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বাবু তার বন্ধু জাহিদুলকে নিয়ে ফেরদৌসিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ নবেম্বর সন্ধ্যায় বোনকে দিয়ে বীমা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ফেরদৌসীকে বাসা থেকে ডেকে আনে জাহিদুল। মেয়ে তাসমিয়াকে নিয়ে ফেরদৌসি একই রিক্সায় চড়ে জাহিদুলের সঙ্গে মহানগরীর দেশীপাড়ার বিমানবাহিনীর টেক এলাকায় যান। সেখানে নির্জন এলাকায় পৌঁছা মাত্রই ফেরদৌসির গলায় ছুরিকাঘাত করে জাহিদুল। এ সময় ধ্বস্তাধস্তিতে জাহিদুলের হাত কেটে যায়। ঘটনাস্থলে আগে থেকে অপেক্ষমাণ বাবু চাকু দিয়ে আহত ফেরদৌসির গলার অপর অংশ কেটে ফেলে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ফেরদৌসি। এ ঘটনা দেখে তাসমিয়া কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও মুখ চেপে ধরে গলা কেটে হত্যা করে জাহিদুল।
পরে তারা নিহত ফেরদৌসির মোবাইল ফোন ও হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পথে তারা ব্যাগটি একটি ঝোঁপের মধ্যে এবং মোবাইল ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু দুটি সালদিয়া গ্রামের একটি পুকুরে ফেলে দেন। পুলিশ মধ্যরাতে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। পরে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে জাহিদুলকে ও পরে বাবুকে এ ঘটনায় গ্রেফতার করে।
তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের হ্যান্ডব্যাগ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাকু ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ইজ্জত আলী সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। শনিবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দু’দিন আগে তারা মোটরসাইকেলে ঘুরে হত্যাকান্ডের জন্য মহানগরীর সদর থানাধীন দেশীপাড়া এলাকার বিমান বাহিনীর নির্জন টেক বেছে নেয়। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য সুইচ গিয়ার দুইটি সাড়ে তিনশ’ টাকা দিয়ে রাজধানীর বায়তুল মোকারম এলাকার ফুটপাতের দোকান থেকে কিনে আনে জাহিদুল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।