জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সিরাজপুর এলাকায় মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগে পাওয়া গেছে। সুদের টাকা আদায় করতে স্থানীয় কয়েকজন সুদ ব্যবসায়ী ওই তাঁদের গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- নিজেদের বাঁচাতে ৯৯৯-এ এবং ১০৯-এ ফোন দিলেও পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে যায়নি।
আহতরা হলেন কালিয়াকৈর উপজেলার সিরাজপুর এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩০) ও তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমা (১৬)। ঝুমা মনিপুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
ভুক্তভোগী পরিবার, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছর আগে মমতাজ বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর মমতাজ বেগম তার একমাত্র মেয়ে ঝুমাকে নিয়ে বোনের জমিতে বসবাস করে আসছেন। এ ছাড়া তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করে মেয়ে ঝুমাকে লেখাপড়া করিয়ে আসছেন। নানা অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোরকমে তাদের সংসার চলছে। কিন্তু একটি প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়ে স্বর্ণালংকারসহ আনুমানিক প্রায় ৩ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন বিধবা মমতাজ বেগম। পরে তাকে বাধ্য হয়ে স্থানীয় গফুর ডাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়। এরই মধ্যে প্রায় দুই মাস কাটতে না কাটতেই সুদ কারবারিরা সুদের টাকা আদায় করতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দেয়। এ বিষয় নিয়ে চলতি মাসের ১ তারিখ সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহিম সিকদার মধ্যস্থতা করে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় বেঁধে দেন। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময় শেষ না হতেই সুদ কারবারি গফুর ডাইভার, তার স্ত্রী কুলসুম বেগম, ছেলে রিপন হোসেন এবং মনির হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে মুক্তা আক্তার, ছেলে শহিদ হোসেন, স্থানীয় নয়ন হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিধবা মমতাজ বেগমের বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় তারা সুদের টাকা আদায় করতে বিধবা মমতাজ বেগমকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করতে থাকে। মাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ঝুমা এগিয়ে গেলে তাকেও একই গাছে বেঁধে রাখে। এ করুণ দৃশ্যটি ভিডিও ধারণ করতে গেলে মমতাজের ছোট বোন মেহেরিন সুলতানা নুরমিনকেও তারা গাছের সঙ্গে বাঁধার চেষ্টা করেন।
মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রায় ঘণ্টাখানেক পাশবিক নির্যাতন চালালেও কেউ এগিয়ে আসেনি। দৌড়ে কোনো রকমে পালিয়ে গিয়ে নুরমিন প্রথমে ৯৯৯-এ ও পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ফোন দেন। ৯৯৯-এ এবং ১০৯-এ ফোন দিলেও কেউ তাদের উদ্ধার করতে যাননি বলে মমতাজের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। এমনকি স্থানীয় ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জামাল উদ্দিনকে জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। পরে ওই ইউপি সদস্য বিধবা মা ও মেয়েকে উদ্ধার করলে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। বিকেলে বিধবা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী বিধবা মমতাজ বেগম বলেন, একটি প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা হারিয়েছি। ওই টাকা যোগাড় করতে গফুর ডাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা সুদ করে নিতে হয়েছে। ওই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম আমাকে আগামী এক মাসের সময় দিয়েছেন। আমি ওই টাকা ফেরত দেব। কিন্তু ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে ও আমার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে। আমাদের বাঁচাতে আমার ছোট বোন ৯৯৯-এ কল দিলেও পুলিশ আমাদের উদ্ধার করতে আসেনি।
অভিযুক্ত গফুর ড্রাইভার জানান, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি মিথ্যা। তবে আমি মারি নাই, আমি জানিও না। অপর অভিযুক্ত মনির হোসেনের মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ করে তার মেয়ে মুক্তা। তিনি বলেন, উল্টো মমতাজ বেগমরাই আমাদের মারধর করেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম সিকদার জানান, ঘটনা শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে তাদের মারধর করছে। পরে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক।
ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জামাল উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় ৯৯৯-এ থেকে ফোন আসলে স্থানীয় মেম্বারকে পাঠানো হয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্র : কালের কন্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।