গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সরকারি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে। চিকিৎসক সংকটের অজুহাতে বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে এই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো। এদিকে সন্ধ্যা হলেই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ভেতর জমে ওঠে মাদকসেবীদের আড্ডা। নানা অবহেলায় প্রান্তিক মানুষের জন্য গড়ে তোলা এসব সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র হতে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়া তথ্য মতে, প্রান্তিক মানুষদের চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে সরকার এই উপজেলায় পাঁচটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলে। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন মিডওয়াইফ ও একজন অফিস সহায়কের পদ রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে কোনো চিকিৎসক যোগদান না করায় এসব উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ সময়ই এগুলো বন্ধ রাখা হয়। সবচেয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে কাওরাইদ ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। চালু রাখার মতো জনবল না থাকার সুযোগে এই উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীসহ নানাবিধ অপরাধের আখড়ায়।
আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেলা ১১টায় কাওরাইদ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কেন্দ্রটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওই সময় কাওরাইদ এলাকার মাসুম মিয়া নামের এক ব্যক্তি তার আট বছর বয়সী ছেলে ইয়াসিনকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসেন এই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু বন্ধ থাকায় ছেলেকে নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
স্থানীয়রা জানান, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি কয়েক বছর ধরেই বন্ধ হয়ে আছে। প্রতিদিনই অনেক রোগী আসেন, কিন্তু বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যান তারা। এদিকে বন্ধ থাকার সুযোগে সন্ধ্যার পর চিকিৎসা কেন্দ্রটির ভেতরে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। আর স্থানীয়রা উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কক্ষগুলোতে গবাদি পশু লালন-পালন করে তা গোয়ালঘরে পরিণত করেছে।
বেলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা খোদেজা বেগম জানান, গত পাঁচ বছরে একদিনও এই চিকিৎসা কেন্দ্রে একজনকেও সেবা দেয়া হয়নি, মাঝে মধ্যে একজন লোক আসে আবার কিছুক্ষণ পর চলে যায়।
কাওরাইদ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের অফিস সহায়ক আনিছুর রহমান জানান, এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রেষণে অন্য স্থানে চলে গেছেন। অন্যরাও আসেন না। চিকিৎসা দেয়ার মতো এখানে কেউ নেই। এ সুযোগে স্থানীয়রা ভেতরে গবাদি পশু রাখেন। কেউ তার নিষেধ মানে না। আর সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীসহ বিভিন্ন অপরাধীরা এখানে আশ্রয় নেয়। বাধা দিলে তারা তাকে বিভিন্ন হুমকি দেয়। মাদকসেবীদের ভয়ে তটস্থ থাকতে হয় সব সময়।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাইনুল হক খান জুমবাংলাকে জানান, উপজেলার পাঁচটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোনোটিতেই চিকিৎসক নেই। সবাই যোগদান করেই প্রেষণে চলে গেছেন। এজন্য চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে সবচেয় খারাপ অবস্থায় কাওরাইদ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি, সেখানে জনবল না থাকায় অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। সরকারি এই চিকিৎসা কেন্দ্রের ভেতরে মাদকসেবীদের আড্ডা ও স্থানীয়রা গবাদি পশু রাখায় আমরা বিব্রত। বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে উপস্থাপন করেছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।